Shopnobilap
পাগলী-বউ part-05-min

পাগলী বউ (পর্ব-০৫)

একটা নরম ধাক্কায় অলস ঘুম ভাঙ্গতেই বুঝলাম বাড়ি পৌছে গেছি, বিয়ে করে বউ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম এখন আত্মীয়-সজন পারা-প্রতিবেশী দের মন্তব্য তীর প্রতিহত করার পালা শুরু. বউ এর চোখ টেরা নাক বোচা দাতে ময়লা, আরো নানান কথা. তাদের বাছাই পর্ব যেনো শেষ ই হয়না. যত সুন্দর মেয়েই এনে দাওনা কনো তারা কোনো না কোনো খুত বের করবেই. সবাই টানাহেচরা করে বউ কে নিয়ে চলে গেলো, বুঝলাম এবাড়ির প্রধান আকর্সন এখন আর আমি নই. যাওয়ার আগে অসহায় দৃষ্টিতে বউ একবার আমার দিকে তাকালো, কিন্তু কিছু বলার আগেই ছোট সয়তানের দোল চোখের সামনে থেকে তাকে উধাও করে দিলো. খুব বেসি রাগ হলোনা কারণ একটু পরেই তো সেই সময় যার জন্য এত আয়োজন. আমি অবস্য সব পরিকল্পনা করেই রেখেছি এখন সেই মত ঠিকঠাক ভাবে হলেই ভালো. গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার পাসের মাঠের খোলা হওয়ায় জিরিয়ে নিলাম. সেই সাথে আমর অভিজ্ঞ বন্ধুদের থেকে কিছু পরামর্স নিমল যা একটু পরেই আমর কাজে লাগতে পারে. বাসর ঘরে ঢোকার আগে মানুষিক সস্তি দায়ক কথা বলছে, কেউ কেউ আবার একটু লজ্জা পাওয়ার জন্যও বলছে কিন্তু কেন জানি আমার একটুও লজ্জা পাচ্ছেনা. শুধু বউটার জন্য একটু টেনসান হচ্ছে. এত দুরে একটা নতুন পরিবেশ নতুন নতুন মানুস জন, কি জানি কি করছে.

এর মধ্যেই আমার ডাক পড়ল, রাতের খাবার সহ সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে আমি এখন সেই মুহুর্তে, আজ আমর বাসর রাত. যার পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই করে রেখেছি, কিন্তু কোথায় থেকে শুরু করবো সেটাই বুঝতে পারছিনা. অনেক সুন্দর করে ঘড়টা সাজানো হয়েছে কিন্তু আমি যেমনটা চেছিলাম ঠিক তেমনটা হয়নি, খাটে আমর বউ বসে আছে লম্বা ঘোমটা দিয়ে. আমাদের চার বছরের প্রেম, অনেক চেনাজানা অনেক কথা বার্তা হয়েছে আমাদের. তবে বাসর ঘরের অভিজ্ঞতা এই প্রথম. এর আগে কোনদিন বিয়ে করিনি তো তাই জানিনা বাসর রাতে বউকে কি বলতে হয়. মনে করার চেষ্টা করছিলাম বাসর রাত নিয়ে আমর যে পরিকল্পনা তাতে কি বলে শুরু করবো তা ঠিক করে ছিলাম. এমন সময় আমর বউ বলে উটলো
– আমর চুরি কোথায়?
এইটা সুনে আমর অনেক আশ্চর্য হওয়ার কথা, কারণ বাসর রাতে কোনো বউ তার বরকে বলা প্রথম কোথায় চুরি চায় এমন টা আমর জানা নাই, কিন্তু আমি একটুও আশ্চর্য হলাম না. কারণ আমি জানি আমর সামনে লম্বা ঘোমটা দিয়ে যে বসে আছে সে আমার পাগলী বউ, সে কখন যে কি বলবে আর কি করবে তা আগে থেকে জেনে রাখাটা অনেক মুসকিল. কি বলে কথা শুরু করবো তা নিয়ে যে জটিলতা তা আর থাকলো না. ছোট ছোট পায়ে তার পাসে গিয়ে লম্ব্বা ঘোমটা টা সরিয়ে চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম,
– যদি চুরি না দেই তাহলে কি করবে?
– তাহলে আজ তোমার আর এ বিছানায় ঘুমানো হবে না.
– আর যদি দেই তাহলে?
– তাহলে বিছানায় তো থাকতে পারবে কিন্তু সারারাত ঘুমাতে দেবনা.
– কেনো? সারারাত ঘুমাতে পারবোনা কেনো?
– কারণ আমি চুরি পরে তোমার কানের পাসে ঝনঝন সব্দ করবো তাই.
– আর কি করবে?
– সবটা শুনতে হয়না, যখন করবো তখন দেখতে পাবে. এখন যাওয় আমর কাঁচের চুরি নিয়ে আসো.
– কোথায় যাবো?
– কোথায় মানে? যেখানে রেখেছো সেখান থেকে নিয়ে আসো.
– কিন্তু আমি তো চুরি আনিনি.
– কুত্তা, মিথ্যা বলবিনা. আমি জানি তুমি এনেছ.
– সত্যি বলছি আনিনি.
– দাওরে, ওমন করছ কেনো. আমি জানি তো তুমি এনেছ.

আমর বউটা যখন অভিমান করে তখন ওর মুখটা এইটুকু হয়ে যায়. ছোট ছোট করে কথা বলে. যদিও ও জানে আমি কিছুই ভুলিনি তারপরেও কেনো জানি অভিমান করছে. বাসর রাতে আমার কাছে ওর কিছু আবদার ছিলো, তার মধ্যে লাল কাঁচের চুরি, চকলেট আর আইচক্রিম অন্যতম. আমর পরিকল্পনায় এই সব কিছুই আছে তাও কেনো জানি আমি নাটক করছি.
– এই নাওয় তোমার চুরি.
– তুমি পরায়ে দিবে?
– আমি চুরি পরাতে পারিনা, ভেঙ্গে গেলে তোমার হাত কেটে যাবে.
– যাক, তাও পরিয়ে দাওয়.
– পারবোনা, তুই নিজেই পর.
– দাওয় রে,
– তাহলে শুধু একটা?
– হুম তাই দাওয়.
– ভালই তো পারো, বাকি গুলোও দাওয়.
– তুমি নিজেই পরে নাওনা আমি পরাতে গেলে ভেঙ্গে ফেলবো.
– ঠিক আছে কুত্তা তোকে পরাতে হবেনা, আমি নিজেই পরে নিবো.
প্রায় ভুলেই গেছি আজ আমাদের বাসর, আজ থেকে আমরা একসাথেই থাকব. ওর আজব আজব ইচ্ছা, চাহিদা আর প্রশ্নের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখায় বেস্ত আছি. ওর ছোট ছোট পাগলামি গুলো আমর অনেক ভালো লাগে. এতোদিন শুধু বলেই এসেছে বিয়ের পরে মজা দেখাবে, জানিনা এখন কি করবে. অনেক মনোযোগ দিয়ে চুরি পরছে দেখতে ভিসনই ভালো লাগছে. এক ফাকে আমার দিকে তাকিয়ে বললো

– কি দেখছো ওমন করে?
– তোমাকে!
– কেনো? আগে কখনো দেখনি?
– বউ সেজে তো দেখিনি.
– দেখা শেষ? এখন আমার চকলেট দাওয়!
– তার আগে বলো, রাস্তায় এতো কান্না করলে কেনো?
– যাতে তারাতারি তোমার বাড়িতে নিয়ে আসো এই জন্য!
– পেত্নী!
– পেত্না, চকলেট দাওয়! চকলেট দাওয়!
– নাই তো,
– দাওয় বলছি, নাহলে কিন্তু জোরে জোরে কান্না করবো.
– করো, আমার কি.
– আম্মুকে বলে দিবো কিন্তু তুমি আমাকে জ্বালাচ্ছ.
– বলো, আমি কি তোমাকে না করছি.
– আম্মু,,,,,,,,,,
– আরে দাড়াও দাড়াও, করো কি, চকলেট দিবো তো এত রাগারাগির কি আছে. অনেক চকলেট এনেছি তো.
– আর আইচক্রিম?
– হুম সব আছে, চিত্কার করোনা তো.
– কি, আমি চিত্কার করছি? কুত্তা!
– নাহ নাহ আমি কখন বললাম তা, তুমি তো গান গাইছ!
– হুম, গুড বয়!
– হুম!
– চকলেট খাইয়ে দাওয়!
– পারবোনা তুই নিজে নিজেই খা.
– তাহলে আসো আমি তোমাকে খাইয়ে দেই.
– হুম দাওয়.
– নাহ থাক. আমি খেয়ে নেই বাচলে পরে দিবো.
– ওকে দিতে হবেনা, তাহলে আর যা যা এনেছি তার কিছুই পাবেনা.
– নাহ বাবু আমি তো মজা করছিলাম, আসো সুন্দর করে তোমাকে খাইয়ে দি.
– লাগবে নাহ আমার, তুই ই খা.
– রাগ করেনা বাবু, আচ্ছা বলো তো আর কি কি এনেছ আমার জন্য?
– কিছু নাহ, বলবনা যা,,,,,

এরকম দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া চলতেই থাকে আমাদের, হয়ত সারাজীবন চলতেই থাকবে. এর জন্য আমাদের ভালবাসা কমে যায়না বরং আরো বেড়ে যায়. বাসর রাত নিয়ে আমর পরিকল্পনা এবং যা যা করণীয় সবটাই সফল ভাবে শেষ করেছি. সবে তো পথ চলা শুরু,

4.7/5 - (4 votes)

Nafis Ahamed

x