Shopnobilap
পাগলী-বউ part-06

পাগলী বউ (পর্ব-0৬)

হানিমুনে যাওয়ার মতো সময় ও সমর্থ কোনটাই নেই আমার, তারপরও বউ এর কাছে জানতে চাইলাম কথাও হানিমুনে যাওয়ার ইচ্ছা আছে কি নাহ? উত্তর “কাশ্মীর” ওর চোখে মুখে আনন্দ ঝলকাচ্ছে, যেনো ধরেই নিয়েছে আমরা কাল বা পরসুর মধ্যেই হানিমুন করতে কাশ্মীর রওনা হয়ে যাবো.
– কেনো? আমরা কি কাশ্মীর যাচ্ছি?
– হুম যাবো, তবে পরে. তার আগে চলো কাছে কথাও ঘুরে আসি.
– নাহ, আমি কাশ্মীর ই যাবো, তুমি আমাকে নিয়ে যাবে কিনা তাই বলো?
বুঝলাম জানতে চাওয়াটা আমার অনেক বড়ো অপরাধ হয়ে গেছে, কিছুতেই বউ এর বায়না থামছে না. এখন মুখে হাসি ফোটানোর জন্য মিথ্যে বলা ছাড়া আর কোনো উপায় নাই. কিন্তু এতে তো পরে অনেক কষ্ট পাবে. পরে নিয়ে যাবো বলে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করলাম কিছুতেই কিছু হলোনা. এখন আমারও একটু একটু রাগ হচ্ছে, কেনো তুলতে গেলাম এই কথা কেজানে. একটু উচু গলায় ধমক দিয়ে বললাম
– পারব না, তোমাকে আমি কথাও নিয়ে যেতে পারব নাহ.
কথাটা শেষ হতে নাহতেই বউ থেকে রাক্ষস হয়ে উঠলো, ছুটে আসে আমার গলা চেপে ধরলো. আমি কিছু বুঝেই উঠতে পারলাম না হঠাৎ কি হলো. ধীরে ধীরে আমার গলায় চাপ বাড়ছে, দম বন্ধ হয়ে আছে. হাত পা অনেক ছোটাছোটি করার পরও নিজেকে বাঁচাতে পারছিনা. সরীর অবশ হয়ে আসছে, মনে হচ্ছে বউয়ের হাতে এখনি মারা যাবো.

জোরে এক ধাক্কায় আমার চোখ খুললো, তিন সেকেন্ড পাগলের মত থাকা পর সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বুঝলাম এতক্ষণ আমার সাথে যা যা ঘটছে তা একটা দুস্বপ্ন ছিলো আমি গভীর ঘুমে ছিলাম, বউয়ের ধাক্কায় ঘুম ভাঙ্গলো.
– অনেক বেলা হয়ে গেছে, উঠবে না?
– হুম
– এতো ঘেমে গেছো কেনো? গরম লাগছে?
– নাহ, ভয় পেয়েছি.
– কেনো? খারাপ স্বপ্ন দেখেছ?
– না এমনি, কিছু হয়নি.
– যাওয় ফ্রেশ হয়ে আসো খাবার রেডি হয়ে গেছে.
– ওকে!
ব্রাশ করতে করতে মনে হলো আজ আমাদের বিয়ের প্রথন দিন, কিন্তু বউ আমার সাথে এতোটা স্বাভাবিক আচরণ করলো যেনো মনে হলো আমাদের সংসার করার একযুগ পার হয়ে গেছে. স্বপ্ন দেখার বেপারটা নিয়ে একটুও জ্বিদ করলনা. বিয়ের পরে কি পাগলীটা ভালো হয়ে গেলো, নাকি বড়ো কোনো প্লেন আছে, কিজানি!

বাড়িতে এখনো বিয়ের আমেজ কাটেনি, নতুন বউকে নিয়ে সবাই টানাটানি করছে, পারাপ্রতিবেসিরাও আসছে বউ দেখার জন্য. বুঝলাম কেনো আমার প্রতি মনোযোগ নাই. খাবার শেষকরে রুমে আসে আবার শুয়েপরলাম, মাথার ভেতরে নানান কথা আর চিন্তা ঘুরতে লাগলো সব থেকে বেসি যে কথা মাথায় আসছে তাহলো আমি এইরকম একটা স্বপ্ন কেনো দেখলাম. আমার বউটা তো অনেক লক্ষী একটা মেয়ে, এটা ঠিক যে আমরা অনেক দুষ্ট-মিষ্টি ঝগড়া করি কিন্তু কখনো এমন কিছু হয়নি বা করিনি যে ও এতটা রেগে যাবে, কিম্বা এইরকম কিছু করতে পারে তাওতো কখনো ভাবিনি. তাহলে এমন অত্ভুত স্বপ্ন কেনো দেখলাম. কিছুতেই হিসাব মিলছে নাহ. তবে কি সত্যি সত্যি সময়ের সাথে সাথে আমার পাগলী বউটা পাল্টে যাবে? আবার কিসব ভাবছি আমি, ওইটা তো শুধু একটা স্বপ্নই ছিলো যার সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই. মনে হচ্ছে সত্যিই একবার ওকে হানিমুনের কথা জিজ্ঞাস করতে হবে, তাহলে রিঅ্যাকশন দেখেই বুঝাযাবে স্বপ্ন আসলে কতটা সত্যি. আর নাভেবে বউকে ডাকলাম
– কি!
– এমনি কিছুনা,
– তো ডাকলে কেনো?
– অনেক্ষণ তোমাকে দেখিনা তো তাই ডাকছিলাম.
– দেখা শেষ? এখন যাই?
– হুম যাওয়.
– নাহ যাবোনা, তোমার পাশেই থাকব. এখন বলো কি বলতে ডাকছ?
– কিছুনা তো, এমনি! ভাবলাম তুমি যদি আমাকে কিছু বলতে চাওয় তাই.
– হুম বলতে চাই তো, আচ্ছা বলো আমরা হানিমুনে কবে যাবো?
এখন আমি একটু অবাকই হলাম, আমি তো এইটা বলার জন্যই ডেকেছি. কিন্তু আমি ওকে এইটা জিজ্ঞাস করতে কেনো ভয় পাচ্ছি বুঝলামনা. হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো
– কি ভাবছো? বলো কবে যাবো?
– যেদিন ইচ্ছা, তুমি যেদিন বলবে সেদিনই যাবো. বলো কবে যেতে চাওয়?
– আগে বলো কোথায় নিয়ে যাবে তারপর বলছি কবে যাবো.
এখন আমার ভয়টা আরো বেড়ে যাচ্ছে, বারবার স্বপ্নের কথা মনে পরছে. হাত দিয়ে গলা লুকিয়ে ভাবছি এখনি হাঁ রেরেরে করে ছুটে আসে আমর গলা টিপে ধরবে. একটা ঢোকচিপে বললাম
– বলো তুমি কোথায় যেতে চাওয়?
– আমি যেখানে যেতে চাই নিয়ে যাবে?
একবার মনে হচ্ছিলো ওকে সুযোগ নাদিয়ে আমিই ঠিক করে নেই কোথায় যাবো, আবার ভাবলাম দেখি স্বপ্নের বেপারটা কতটা সত্যি হয়. তাই ওর ইচ্ছাটাই জানতে চাইলাম.
– হুম, বলো কোথায় যেতে চাওয়?
– কাশ্মীর! আমার অনেক দিনের ইচ্ছা কাশ্মীর ঘুরে দেখার.
এইবার মনে পরেছে ওই তো কাশ্মীরে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছাটা আমাকে আগেও বলেছিলো. আর আমি ওকে বলেওছিলাম সুযোগ হলে আমরা একবার কাশ্মীর ঘুরতে যাবো. তাহলে আমি যে এতক্ষ ভয় পেলাম তার কি হলো! তারপরও একবার ঝালিয়ে নেয়ার জন্য স্বপ্নের মত করেই বললাম

– জানিতো, কিন্তু এখন তো পারবোনা, পরে নিয়ে গেলে হবে?
– হুম হবে, নাযেতে পারলেও হবে. ওইটা তো শুধু আমার একটা ইচ্ছা মাত্র, কত ইচ্ছাই তো পূরণ হয়না. তোমাকে বর হিসাবে পেয়েছি এটাই আমার অনেক বড়ো পাওয়া আর কিছু চাইনা.
– ওলে আমার জানু টা, আসো একটা চুমু দিয়ে দি.
– পরে নিবো আগে বলো ঘুরতে কোথায় নিয়ে যাবে?
– পরে জানতে পাবে.
– নাহ, আমার এখনি জানতে হবে,
– বলবোনা কি করবি?
– কামর দিবো!
– কেনো? তুই কি কুত্তি?
– তুই কুত্তি, নাহ কুত্তা!
– তুই তুই,
– তুমি আমার সাথে ঝগড়া করছো কেনো? আম্মুকে বলে দিবো কিন্তু. দেখছোনা আমি কত লক্ষী বউ সেজে আছি, কত সুন্দর করে শাড়ি পরেছি তাকি খেয়াল করেছো? তানা তখন থেকে শুধু আমার সাথে ঝগড়া করেই চলেছে.
– হুম তাইতো, আমি তো খেয়ালই করিনি আমার বউটা প্রথম দিনই এতো লক্ষী হলো কি করে.
– ফাজলামি কোরনা তো, সত্যি করে বলোনা শাড়ি পরে আমাকে কেমন লাগছে?
– সত্যি বলবো?
– হুম বলো!
– একদম………. প, পেত্নীর মত লাগছে!
– কুত্তা! তুই পেত্না! আম্মু বলছে আমাকে অনেক সুন্দরী লাগছে!
– রাগ করেনা বাবু! তোমাকে আজ পরীর মত সুন্দর লাগছে!
– হুম জানি জানি আর বলতে হবেনা. তুমি তো আমার দিকে ভালো করে দেখছোইনা. এক দিনেই পুরাতন হয়ে গেছি তাইনা.
– আচ্ছা সরি! আর এমন করে বলবোনা. তুমি তো আমার লক্ষী বউ!
– তাহলে বলো আমাকে কোথায় বাড়াতে বিয়ে যাবে?
– এখনো ভোলনি, বললাম তো পরে বলবো, তোমাকে ডাকছে এখন যাওয়.
– ওকে, আমি কিন্তু একটু পরে এসেই শুনবো ঠিক আছে.
– হুম ঠিক আছে.

পাগলী একটা! কোথা থেকে শুরু করে আর কোথায় যে শেষ করে তা শুধু ওপর ওয়ালাই জানে. তবে যাই হোক আমর বউটা যে অনেক ভালো মনের মানুষ এইটা নিয়ে আমর কোনো সন্দেহ নেই. এর মধ্যে বন্ধুদের ফোন চলে আসছে তাদেরও একটু সময় দিতে হবে, সবে বাসর রাত শেষ করেছি কিজানি কি সব তাদের প্রশ্নের মোকাবেলা করতে হবে.

5/5 - (3 votes)

Nafis Ahamed

x