Shopnobilap
অবহেলায় পেলাম ভালোবাসা
অবহেলায় পেলাম ভালোবাসা

অবহেলায় পেলাম ভালোবাসা

প্রাইভেট পড়ে আসার সময় আংকেলের সাথে নতুন স্যারকে আসতে দেখলাম আমার বাড়ির দিকে, সালাম দিলাম তাদের দুজন কে। আমাকে আর আপুকে একাউন্টিং পড়াবে উনি। সপ্তাহে চারদিন করে পড়ায় । আমি তখন একাদশ শ্রেনিতে পড়ি। আমার আপু দ্বাদশ শ্রেনিতে পড়ে।প্রথম যখন স্যার পড়াতে আসতো প্রয়োজন ছাড়া খুব কম কথা বলত, এরপর যতদিন যেতে থাকে ততোই ফ্রেন্ডলি হতে লাগলো আমাদের সাথে, কিন্তু আমার এমন মোটেও পছন্দ হত না, বরাবরই  মনে হতো স্যার স্যার এর মতই থাকবে অত আদিক্ষেতার কি দরকার।

দেখতে দেখতে আপুর ইন্টার ফাইনাল পরিক্ষা শেষ হয়ে গেল, তখন থেকে স্যার আমাকে একা পড়াত । আমার তখন অন্য একটা ছেলের সাথে প্রায় আড়ায় বছরের সম্পৰ্ক । একপর্যায়ে ছেলেটার নামে বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন কথা শুনতে পেলাম, অনেক প্রমানও পেলাম এবং ছেলেটাকে সংশোধন হতে সুযোগ দিলাম তারপরও সে সুধরালোনা । অবশেষে রিলেশন ছিন্ন করলাম । কিছু করার না থাকলে যা হয় আর কি । একসময় স্যার আমার সম্পর্কের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কিছু জেনে যায়, তার পর থেকে দিনের সাতে সাতে স্যার এর কথা বলার ধরণ ও পরিবতন হয়ে যায় ,  আমাকে পড়ানোর সময় খেয়াল করতাম ওনার চোখে মুখে কি যেন লুকিয়ে থাকতো ।

মজার ব্যাপার হলো স্যার আমাকে আপনি করে কথা বলতো । একদিন বলেই ফেললো আমি আপনার কাছে একটা জিনিস চাই  যেটা ধরা যায় না, ছোয়া জায় না, দেখা ও যায় না, যার কোন রংও  নেই, শুধু অনুভব করা যায় । যখন এই ধরেন কথা বলত আমার মেজাজ ধরে যেত, নিজেকে কষ্ট করে নিয়ন্ত্রণে রাখতাম । এই ভাবে কিছু দিন কেটে গেলো । কিন্তু হঠাৎ স্যার খুব অসুস্ত হয়ে পড়ল, স্যার এর ল্যান্সে পানি জমেছে । স্যার এর মুখ দেখে খুব মায়া হতো, খাওয়া দাওয়া নিয়ে খুব অনিয়ম করত । চোখের সামনে একটা মানুষ কে এভাবে দেখলে কার না মায়া লাগে ? তাই আমি মাঝে মধ্যে জিজ্ঞেস করতাম যে খেয়েছেন কি না, ঠিক ভাবে ঘুমান কি না, আরো অনেক কিছু । এই শিক্ষা আমি উনার কাছেই পেয়েছি । যখন আমার মন খারাপ থাকতো উনি মেথ করাত না, আগে আমার মন ভালো করার জন্য বিভিন্ন ভাবে আমাকে হাসানো চেষ্টা করতো, কারন স্যার জানতো ছেলেটার সাথে রিলেশন এর ব্যাপার টা আমার ফ্যামিলি জেনে যাওয়ায় আমি খুব পেইন এ ছিলাম,তাই মন খারাপ থাকলে মেথ ববুজবনা |

এই সব কিছু জানার পরও স্যার বার বার বুঝাতো যে আমাকে ভালোবাসে সেটা, আমি বুঝেও না বুঝার ভান করতাম,হেসে হেসে উনার কথাটা উড়িয়ে দিতাম। ২৩অক্টোবর আমার জন্মদিন ছিল,সেদিন সকাল থেকে মোট তিন বার কল দিয়ে রাতে আমাকে পেল কথা বলার জন্য,যদিও সকালে আমাকে মেসেজ এ জন্মদিনের ওইস করেছে, কিন্তু আমি কোন রিপ্লাই দেইনি |

রাতে কথা বলে আবার উইশ করল । টাউনে ছিল তাই সে দিন আসতে পারে নি, এর পর দিন এসেছে পড়ানোর জন্য একপ্যাকেট চকলেট নিয়ে,আমি নিলাম,আর বললাম শুধু সুধু এসব কেন? স্যার বলল এটা সামন্য কিছু । সেদিন স্যার উইশ করাতে আমার আম্মু খুব মাইন্ড করেছে কারন মেসেজ টা আমার আম্মু পেয়েছে তাই, আর সেদিন আমার আম্মু কার থেকে মিথ্যে কথা সুনেছে আমি না কি কোন ছেলের সাথে ঘুরতে গিয়েছি, আর স্যার কল করে জিজ্ঞাস করেছে সে দিন আমি কলেজে গিয়েছি কি না, সব মিলিয়ে আম্মু আমার ব্যপারে জিজ্ঞাসা করার জন্য স্যারের কাছে আসলো, আমিও পড়ার টেবিলে বসে আছি, স্যার এর কাছে আম্মু জিজ্ঞাস করতেছে আমি কলেজে গিয়েছি কি না, কোথায় ঘুরতে গিয়েছি কি না এইসব, স্যার বলল না আসলে আন্টি ও তো কলেজে গিয়েছিল, যদিও আম্মু আসার আগেও স্যার আমাকে জেরা করতেছে যে আমি আসলে কলেজে গিয়েছি কি না, আর কোন কোন ফ্রেন্ড কলেজে গেছে ইত্যাদি । এরপর আম্মু স্যারের সামনে এই গুলো বলাতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল, চোখে অনেক জল জমেছে, আর মনে মনে ভাবছি শুধু মাত্র ঐ ছেলেটার সাথে রিলেশন থাকার ফলে আজ আমাকে এতগুলো কথা শুনতে হচ্ছে, মাটির নিচে গেথে যেতে ইচ্ছে করেছিল আমার । আম্মু রুম থেকে চলে যাওয়ার পর পর আমি আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি, সাথে সাথে স্যার কে বলতেছি, আমি কলেজেই গিয়েছিলাম আর কোথাও যায় নি কেন শুধু শুধু আমার নামে এত গুলো মিথ্যে কথা শুনতে হচ্ছে?

এসব বলতেছি আর কাঁদতেছি, স্যারও চুপ হয়ে আছে, বেশিক্ষন না পড়াইয়ে সে দিন স্যার চলে গেলো, খুব কষ্ট পাইছি সে দিন, বলেছিলাম জন্মদিণের উপহার হিসেবে পেলাম চোখের জল। এভাবেই চলতে থাকলো প্রায় এক বছরের বেশি, তখন আমার পরিক্ষা শেষ তাই আমি আর পড়তাম না আমার চাচাত ভাইকে পড়ানোর জন্য স্যার বাড়িতে আসতো, আমি দেখা করতাম না, আপু নাসতা নিয়ে যেত, মাঝে মাঝে আপু না থাকলে নাসতার ট্রে আমাকে নিয়ে যেতে হত । উনার সাথে আমি দেখা করতে যেতাম না কিন্তু বিথি আপু যেত, উনি পড়ার টেবিল থেকে চলেগেলে তারপর আমি পড়ার ঘরে যেতামম, যখন কম্পিউটার ওপেন করতে যেতাম তখন দেখতাম কম্পিউটার ডেক্সে কয়কটা ললিপপ, প্রথমে একটু বিচলিত হতাম, কে রাখল এই ললিপপ গুলো, মুহুর্তে মনে হল স্যার ছাড়া আর কেউ রাখবেনা এগুলো ।

এর পররদিন যখন স্যার আসল আমি দেখাকরতে গেলাম বললাম ললিপপ কেন রেখেছেন, ফেরত দিয়ে দিলাম ললিপপ গুলো, উনি নেই নি । পরে দিন দেখলাম আবার রেখেছে কত গুলো ললিপপ আমি আবার গিয়ে নিষেধ করেছি না রাখতে । ললিপপ গুলো রাখার কারনে স্যারের সাথে আমার দেখ করতে যেতে হয়, আমার এসব ভালো লাগেনা, এর পরও দেখতাম উনি ললিপপ রাখত, আমিও আর কিছু বলতাম না, দেখাও করতাম না ।

আমি ফুলদানির ভিতরে পানি ভর্তি রেখে কাঁচা গোলাপ ভিজিয়ে রাখাতাম, স্যার প্রতি দিন ঐ পানি গুলো অর্ধেক ফেলে দিত, আমিতো জানতাম না কে পানি ফেলত তাই যখন দেখতাম দানিতে পানি নেই আতিক ভাইয়াকে বকাবকি শুরু করে দিতাম,তখন ভাইয়া বলত স্যার তোর সাথে দুসমনি করে পানি গুলো ফেলেদিত ।

বুঝতে পারতাম আমাকে নিয়ে কেন উনি এমন করত, উনি জানত যে এগুলো করলে আমি খুব রেগে যাব এবং উনার সামনে গিয়ে দাড়াব আর উনি সে সুযোগে আমাকে একনজর দেখবে, আমি বুঝে গেলামা এগুলোর রহস্য তাই আর দেখা করতাম না। আর কিছু বলতাম না,মাঝে মাঝে যেতাম গিয়ে সালাম দিতাম, আমাকে জিগ্গেস করত আমি কেমন আছি উওর ঠিক ঠাক দিতাম, কিন্তু আমি উল্টা কখনও জিগ্গেস করতাম না যে আপনি কেমন আছেন।

মাঝে মাঝে উনি কথা বাড়াতো সাবাই কেমন আছে ইত্যাদি । আমি চায়তাম যত তাড়াতাড়ি উনার সামনে থেকে কেটে পড়ি ততই মুক্ত। আবার আমাকে অনেক অনিচ্ছা থাকা স্বর্তে ও মোবাইল নিয়ে উনার কাছে যেতে হত সমস্য গুলো সমাধান করে দিত ।অনেক গুলো সফটওয়্যার দিত গান দিত কয়একটা ছোট নাটকও দিত ।

তখনও মাঝে মাঝে ফোন দিত কথা বলত কথার মধ্যে রিতিমত সে ভালোবাসা বুঝানোর আভাস গুলো ছিল উনার, কোন না কোন ভাবে এগুলো কে পাশ কাটিয়ে যেতাম। তখন উনার ঐ টাইপের কথা গুলো শুনলে খুব রাগ হত আমার, তার পরও ধৈর্য ধরে উনার কথা গুলো শুনতে হত। সে বার নানুর বাড়িতে গিয়েছিলাম। তখন আমার ছোট ভাই উনার কাছে পড়ত আমি পড়তাম না আমি তখন পড়া শুরু করিনি। আম্মু আমাকে বলেছিল রানাকে কল দে তো । আমি কল দিয়ে মাএ আম্মুকে ফোন ধরিয়ে দিলাম, আম্মু আমাকে বলল আগে তুই বল তারপর আমি বলব । আমি কথা না বলেই আম্মুকে ফোন দিয়ে দিলাম আম্মুকে বলে দিলাম আমি কি কথা বলব আপনি বলেন। নানুর বাড়িতে যাওয়ার পর হোয়াটসএপ, ফেসবুক ব্যবহার করতে লাগলাম। রাতে স্যার ফোন দিল হোয়াট্স অ্যাপ এ, কল রিসিভ করলাম কথা বলল আমার সাথে, আবার সে ইমোশনাল টাইপের কথা শুরু করল ।

শুনেই যাচ্ছি আর আমিও ফাজলামি করতেছি । স্যার তখন বলল আমার একটা ছবি দিতে, আমি ছবি দিতে চাইনি উল্টা আরো ফাজলামি করতেছি যে আমাকে কি কখনও দেখেন নি এখন আমার ছবি দিয়ে কি একে বারে চেহারা মুখস্ত করে ফেলবেন?উনাকে মানাতে না পেরে আগের একটা ছবি দিলাম । উনি বলল না এই ছবি হবে না এই মুহুর্তের ছবি চাই । আমি ছবি দিলাম না ।বলেছিলাম আমি পরে ফ্রেশ হয়ে পিক দিব ।

তারপরের দিন সন্ধ্যায় কল দিয়ে কিছু জিজ্ঞস করার পর আমাকে বলল ছবি দিবেন বলেছিলেন ছবি তো এখনও দেন নি। এখনই ছবি দেন, আমি তখন নানা অজুহাত দিলাম যে আমি মাত্র গোসল করে এলাম আমি এখনও মাথা আচড়াই নাই, চুল ভিজা আগে ফ্রেস হয়ে নি তারপর দিব কিন্তু উনি মানতে রাজি না । এর পর আর না পেরে ছবি দিলাম । উনি উনারএকটা ছবি দিল আমাকে ।

এরপর উনি মেসেজ দিত, অনেক সময় কল দিত, উওর দিতাম, এদিকে আমি নতুন নতুন ফেইসবুক নিয়ে নতুন ফ্রেন্ডস দের নিয়ে ব্যস্ত। আমার ইচ্ছা ছিল আমি আর উনার কাছে পড়ব না অন্য কোন টিচার্স এর কাছে পড়ব,কারন টা হচ্ছে উনার সামনে যখন যাই তখন আমার অস্বস্তি লাগত, ভালো লাগত না, দু টানাই পড়ে যেতাম, উনি উনার চোখ দিয়ে, কথার ফাঁকে সে কথাটা বুঝাতে চাইত যে উনি আমাকে ভালোবাসত,, সে জন্য আমি চাই নি উনার কাছে পড়তে, চাই নি উনার সামনে দীর্ঘ ক্ষন থাকতে, কারন আমিও উনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ব, সে ভয়ে আমি উনার থেকে, উনার চোখের সামনে থেকে অনেক দুরে যেতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ফ্যামিলির কারনে পাড়িনি, বাধ্য হয়ে উনার কাছেই আবার পড়া শুরু করলাম।

রমজান মাসে সেহেরি খেয়ে কত আরামের ঘুম দিতাম আর উনার কাছে পড়ার জন্য তাড়াতাড়ি উঠতে হত সে জন্য কাঁচা ঘুম থেকে উঠে পড়ার টেবিলে গিয়ে বসতাম আর ঘুমের মধ্যে মেথ করতাম, যেদিন থেকে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হল সেদিন বিথি আপুকে বলে আমি আর নিজেই পড়তে বসি নি, আমি একদিন পরে বসেছি, আর বিথি আপুও আমার সাথে খুব গরম আমি পড়ব বলে এখন পড়তে বসতেছিনা, ঘরের সবাই আমাকেই বকা দিল, কিন্তু কেউই আমাকে এতটুকুও বুঝার চেষ্টা করলনা,

তারপর থেকে ঘুমের আবেস নিয়ে উনার কাছে পড়তাম, আমার আবার কাঁচা ঘুম থেকে উঠার পর মাথা ধরে যায়, মাথা ঝিম ঝিম করে, মন সব সময় কাজ করত কখন একটা আরামের ঘুম দিব। তাই সব সময় চুপচাপ থাকতাম। উনার দিকে খুবই কম তাকাইতাম । আমার আগে থেকেও এমনটা অভ্যাস ছিল খুব কমই তাকাতাম।

এই ভাবে চলতে লাগল, এর মাঝেও ফোন করা প্রায় মেসেজ করাতো আছেই, মেসেজ করত । কি করেন?খাইছেন? আমি মাঝে মাঝে উওর দিতাম আবার কখনও দিতাম না। স্যার মেয়ের নামে ফেইক আইডি ওপেন করলো আমার সাথে এড হলো, আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি, উনি নিজে মেয়ে সেজে স্যার এর মনের কথা আমাকে বলল । উনি প্রশ্ন করত আমার পোষ্ট গুলো নিয়ে, আমার একটা পোস্টে আমি আমার ভালোলাগা একটা ছেলেকে নিয়ে কিছু পোষ্ট করেছিলাম দেখলাম সে পোষ্ট থেকে উনি আমাকে বিভিন্ন ভাবে জেরা করা শুরু করল, আমি ছেলেটাকে ভালোবাসি কি না, কাকে ভালোবাসি, ইত্যাদি, আমি যা সত্যি তাই বললাম যে আমি কাউকে ভালোবাসি না, তাছাড়া ভালোলাগলেই তো আর সবাইকে ভালোবাসা যায় না, এর পর বলতে লাগল আমাকে, তুমি জাননা তুমাকে রানা অনেক পছন্দ করে, শুনেতো বুঝলাম এইটা একটা দালাল আমার স্যার এর সম্পর্কে আমার মনে কি আছে সেটা জানার জন্য প্লেন। আমি তো আমার মতই অটুট, আমি ঠিক টাক আছি। সব সময় স্যার এর সাথে দেখা হত,পড়াত স্যার এর সাথে দেখা হলে অর্থাৎ পড়ার টেবিলে আমি ও যেতাম বিথী আপুও যেত ।

বিথি আপু সালাম দেওয়ার পর জিগ্গেস করত স্যার কেমন আছেন? স্যার উওর দিত, কিন্তু যখন আমি যেতাম তখন আমি স্যার কে শুধু সালাম দিতাম, আর পুনরায় জিগ্গেস করতাম না যে স্যার আপনি কেমন আছেন। স্যার কিন্তু আমার থেকে জিগ্গেস করত যে আমি কেমন আছি সে কথা, আমিও সোজা উওর দিতাম যে ভালো আছি । একদিন স্যার পড়াতে এসেছিল সে দিন স্যারের মন খুব খারাপ ছিল, তারপরও আমি উনাকে জিগ্গেস করিনি যে স্যার আপনি ভালো আছেন কি না, দুইদিন আসেনি পড়াতে,আমি বললাম কোথাই ছিলেন দুদিন? আমি,আপনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু করতে পারিনি, তখন উনি বলল মোবাইলে সমস্যা ছিল তাই, তারপর আবার স্যার কি কি বলতে লাগল, আমাকে প্রশ্ন করল আপনি এত বিচলিত হচ্ছেন, আমি মরলেও কি আসে যায় কার। কথাটা শুনে আমার খুব খারাপ লাগল।

আশ্চর্য্য আপনি মরবেন কেন। তাছাড়া আপনাকে তো বাঁচতে হবে, স্যার তখন আমাকে প্রশ্ন করল কার জন্য বাঁচব? আমি সোজা উওর দিলাম কেন যার জন্য আল্লাহ আপনাকে সৃষ্টি করেছে তার জন্য বাঁচবেন, এই নিয়ে স্যারের সাথে অনেক কথা হল, সেদিন আমি নানুর বাড়িতে যাই, বিকালে সেখানে যাওয়ার পর বাড়িতে পৌছার পর স্যার ফোন দিল আমরা পৌছাইছি কি না, রাতে আবার ফোন দিল আমি খাইছি কিনা, রাতের বেলাই আবহাওয়ার পরিস্তিতি খুব খারাপ ছিল সবাই বসে আছি, দেখলাম স্যার মেসেজ করতেছে আমিও উওর দিচ্ছি, বাড়িতে থাকাকালীন সময়ে স্যার রিতিমত খবর নিত আমার, খুব যত্নবান ছিল আমার প্রতি,আমার প্রতিটা বিষের প্রতি। নানুর বাড়ি থেকে আসলাম এখন স্যার এর সাথে ইমুতে সারাক্ষন চ্যাটিং হয় সারাক্ষন কথা হত,আগের চাইতে এখন কেমন যেন হয়ে গেছে । কি সহজে মেসেজ এ বলে দেই মিস ইউ। আমার খুব সংকোচ লাগত যে কি ভাবে উনি মিস ইউ বলে, আমি নিস্তব্ধ থাকতাম,সব সময় চ্যাটিং হত তাই, একটা বেলা কিংবা এক দিন চ্যাটে না আসলে স্যার এরপর দিন যোগাযোগ হলে বলত আমি কেন চ্যাট এ আসিনি ইত্যাদি। আবার এইও বলত আপনাকে খুব মিস করেছিলাম, আমি বলতাম। আজ কাল আবার আমাকে মিস ও করা হয়। এই ভাবে প্রায় একটা নেশা হয়ে গেছে উনার সাথে দিনের অনেকটা সময় চ্যাটিং এ থাকা ।

এই বার স্যার নিজে ই আমাকে অনেকটা স্পস্ট করে বুঝিয়ে বলত যে উনি আমাকে ভালোবাসে, কিন্তু আমি বরাবরের মতই তাকে এড়িয়ে চলতাম,আর স্যার কে একটা কথা প্রায় বলতাম যে রানা স্যার অনেক আগে হারিয়ে গেছে কারন আপনার সাথে আমার সে আগের স্যার এর সাথে চেহারার দিক দিয়ে মিল থাকলেও দু জন ই ছিল ভিন্ন ভিন্ন । আপনি কখনও সে স্যার না যাকে আমি চিন্তাম। তারপর স্যার আমাকে বুঝাত,যখন চ্যাটিং হত তখন স্যার সবসময় জিজ্ঞাস করত আমি খেয়েছি কিনা, আর মাঝে মাঝে যদি না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তাম কিংবা না খাইতাম তখন আমাকে বলত আপনি না খাইলে আমিও খাব না, এই টাইপের কথা শুনলে আমার মেজাজ গরম হয়ে যেত, তখণ আমি স্যারকে বলতাম আমি খাইলে আপনি খাবেন এই কথা গুলো আপনি কোথেকে শিখেছেন আমি তো কখনও এমনটা বলিনি, এসব আর বলবেন না। একদিন স্যার কে জিজ্ঞাস করলাম হঠাৎ এত সহানুবভুতি বেড়ে গেল কেন আমার প্রতি, তখন স্যার আমাকে উওর দিল যে উনি জানে না কিন্তু আমাকে খুব মিস করে।।।। কি নিয়ে জেন আমাদের কথা হত তখন আমি উনাকে বলতাম যে, আমি আছি আছি অনেকটা সময় মনে হয় আমার তো কিছুই নাই সব হারিয়ে গেছে,তখন উনি বলত আচ্ছা আমি কি পারবনা হারিয়ে যাওয়া জিনিস গুলো আপনাকে ফিরিয়ে দিতে বা ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে। আমি উনাকে কোন উওর দিনি।

আমাকে প্রশ্ন করল উনি যে আমি উনার পাশে সব সময় থাকব কি না? আমি তখন উনাকে বলেছিলাম,সব সময় তো আর আমাকে প্রয়োজন হবে না,যখন আমাকে প্রয়োজন হবে তখনই আপনার সামনে এসে হাজির হব। স্যার আবার বলেন, যদি বলি সব সময় প্রয়োজন হবে তখন কি থাকবেন? আমি বলেছি, আমি যতদুর জানি সব সময় প্রয়োজন হবে না,তখন স্যার বলল সব সময় প্রয়োজন হবে আপনি কেন এইটা বুঝতেছেন না।এর পর স্যার এর সাথে অনেক টা সময় কথা হত, উনি একটা বলে আমি সেটা ঘুরিয়ে দিতাম। ২০১৫সালের আগষ্ট এর ১২তারিখ উনি আমাকে প্রশ্ন করল আমি কাউকে লাইক করি কি না, তখন আমি উনাকে বললাম লাইক এর অর্থটা আমার কাছে খুবই সামন্য,আমার কাছে লাইক টা হচ্ছে কাউকে শুদু মাএ পছন্দ করা তখন স্যার কে বললাম, আমি হারিয়ে গেছি,অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছি, স্যার আমাকে বল আমি সে অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া মানুষটা আমার পাশে চাই, আমি সে হারিয়ে যাওয়া মানুষটার হাতটা ধরে রাখতে চাই, কি পারবেন সে হাতটা দিতে? আমি কিছুই বলিনি।

এরপরদিন রাতে উনি প্রাইভেট থেকে এসেছে, আমি যখন মেসেজ দিচ্ছি তখন তিনি উলট পালট মেসেজ দিচ্ছে, উনি বাঁচবেনা, উনি সবাইকে কষ্ট দেই, সবাই কে কষ্ট দেওয়ার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো ইত্যাদি, আমি তখন উনাকে শান্ত ভাবে বুঝালাম যে এগুলো বলা ভালো না । সকালে আমাকে উনি মেসেজ দিল যে আমি একটা ছেলের কথা বলেছিলাম সাদিয়া আপুকে সে গুলো সাদিয়া আপু স্যার কে জানাইনি, শুধু মাএ স্যারের নিজের কথা গুলো সাদিয়া আপু উনাকে দিয়েছিল,আমি যখন সাদিয়া আপুর সাথে সব চ্যাট গুলো উনাকে পাঠাই তখন রাতে উনি এমন ভাবে আমাকে উলট পালট মেসেজ দিয়েছে, স্যার এর মনে হয়েছিল আমি এখনও অন্য কাউকে ভালোবাসি, তারপরদিন সকালে উনি আমাকে বলতে লাগল যে উনি আমাকে কিছু একটা বলতে চেয়ে ছিল কয়েক বার কিন্তু প্রতি বার কোন না বাঁধা আসত উনার সামনে তাই উনি আর কিছুই বলতে পারত না। এখন যেহেতু সব বুঝতে পেরেছি, তাই এখন আমার মতামত জানতে চেয়ে উনি আমাকে প্রশ্ন করল আমি উনাকে পছন্দ করি কি না?

আমি কোন উওর দি নি । অবশেষে ১৬ আগষ্ট২০১৫ এ বিকালে আমাকে বলতে লাগল আজ আমার অসর্ম্পূন প্রশ্নের উওর চাই, আমি তারপরও কোন উওর দিনি রাতে আবার প্রশ্ন করল আমি উনাকে লাইক করি কি না, এরপর অনুমতি নিয়ে আমাকে বলতে লাগল, আপনি বুঝেন না আমি আপনাকে কত টা ভালোবাসি,আমার চোখ কি বলতে চাই, কতবার আমি আপনাকে আমার চোখ দিয়ে বুঝায়ছি যে আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি,ইত্যাদি।

অবশেষে কিভাবে স্যার এর প্রেমে পরে গেলাম নিজে ও জানি না । স্যার এর সাথে আমার দিন গুলো ভালোই কাটছিলো, হঠাৎ একদিন আমার এক কাজিন এর জন্য আমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসে, আব্বুও রাজি হয়ে যায়, আমি শত চেষ্টা করেও বিয়ে টা ঠেকাতে পারিনি । আমার বিয়ে হয়ে গেল, স্যারএর ও কিছু করার ছিলনা চোখ দিয়ে পানি ছড়ানো ছাড়া, আজও আমি স্যারকে ভালোবাসি আর সারা জীবন দূর থেকেই ভালোবেসে যেতে চাই ।

আরো ভালোবাসার গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন Valovashar golpo

5/5 - (1 vote)

Broken Hart

x