Shopnobilap
অভিমানী ভালোবাসা

অভিমানী ভালোবাসা

-সায়নী ??
-হুম বলো !
-কি হয়েছে তোমার,কিছু বলছ না কেন ?
-কই কি হবে! কিছু হয় নি আমার।
-চুপ করে আছো যে? শরীর ঠিক আছে তো ?
এই কথা বলতে বলতে হাত ধরতে চায় মাহিন। সাথে সাথে এক ঝটকায় হাতটা সরিয়ে দেয় সায়নী। খবরদার আমার হাত ধরবে না তুমি, বলে উঠে সায়নী। শেষ বিকেলের সোনারঙা আলো ওর চোখেমুখে এসে পড়ছে। তাতে ওর চুলগুলো কেমন জ্বলজ্বল করছে। ফর্সা গাল দুটো লাল হয়ে আছে। রাগে ফুলছে, কিছু বলতেও পারছে না। খুব রাগ করেছে ও। মাহিন যথারীতি তার রাগ ভাঙাতে হিমশিম খাচ্ছে।
-আমি কি করলাম এমন কেন করছো ?
-সারাদিন কোন রাজ কার্য করছিলে যে একটু খোঁজ নেয়া গেল না ?(খুব রেগে )
মাহিন চুপ হয়ে যায়। আজ দিনটা খুব ব্যস্ততার মাঝে গেছে। সকালে বাজার করা, দুপুরে টিউশনি করানো, কোচিংয়ে যাওয়া- সব মিলিয়ে অনেক ব্যস্ততা ছিল। এর মাঝে সায়নীকে ফোন দেয়ার সময় ই পায় নি সে। আর তাতেই মহারাণীর এত অভিমান , এত অভিযোগ !
-আজ সত্যিই অনেক ব্যস্ত ছিলাম। তুমি জানোই তো আমার রুটিন। তবুও কেন এমন ছেলেমানুষী কর ?
-হ্যাঁ জানবো না কেন ? তোমার রুটিনে তো সবই থাকে, তোমার হাজার কাজকর্ম থাকে কেবল আমি ই নেই।
-এটা কি বললা ?? আমি তো তোমাকে সময় দেই যতটুকু পারি ,তারপরও কেন বুঝ না আমাকে…. শুধু শুধু ভুল বুঝ।
-ঠিকই বলেছি। সত্যি কথা বললেই ভুল বুঝা হয় তোমাকে… হুহ। এই বলে ভেংচি কেটে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। মাহিনের প্রচন্ড খারাপ লাগতে থাকে। কিছুতেই বোঝাতে পারছে না তার কাছে সায়নীর গুরুত্ব কতটুকু ? অভিমানী মেয়েটা কি একটুকুও বোঝেনা যে, ওর এই ছোট্ট মনে কেবল তারই আনাগোনা, কেবল তারই মায়াময় ঐ মুখ ভেসে বেড়ায় সারাক্ষণ। মাহিন আনমনে বসে আছে আর ভাবছে কিভাবে সায়নীর রাগ কমানো যায়, কিভাবে ওকে বুঝানো যায় যে– সারাদিন ফোন না দিলেও তাকে অনেক মনে পড়েছে, মিস করেছে সারাদিন। যেভাবেই হোক পাগলিটার রাগ ভাঙ্গাতে হবে এখন, অনেক বেশি রেগে গেছে। পাশ ফিরিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। সায়নী বেলী ফুল অনেক ভালোবাসে তাই ভাবলাম ওর জন্য একটা মালা কিনে নিয়ে আসি ফুল পেলে খুশি হবে… কিন্তু আশেপাশে কোথাও কোন বেলী ফুল পেলাম নাহ। সায়নীর পাশে বসে এই কথা সেই কথা বলে অনেক চেষ্টা করলাম তবুও তার রাগ কমলো না। হঠাৎ দেখি ছোট্ট এক পিচ্চি বেলী ফুলের মালা হাতে ফুল বিক্রি করছে। মেয়েটিকে ডেকে বললাম-

-বেলী ফুলের মালা কত করে ?
-ভাইজান ২০ টেকা পিচ তয় ২ ডা নিলে ৩০ টেকা রাখুম।
-আচ্ছা ঠিক আছে আমাকে ২ টা দে।

বেলী ফুলের মালা হাতে সায়নীর দিকে ঘুরে তাকায় মাহিন। মেয়েটা এখন ফুঁপিয়ে কাঁদছে। চোখ গুলো ফুলে লাল হয়ে গেছে তবুও মেয়েটাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। মাহিন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে খানিকক্ষণ। কাঁদলেও যে মানুষকে এত সুন্দর লাগে ওর তা জানা ছিল না। মনের গভীরে কোথাও যেন বদ্ধ আর্তনাদ হাহাকার করে ওঠে মাহিনের। নিজেরও বড্ড কষ্ট হয়, অস্থির লাগে।
ভালবাসার মানুষটিকে এভাবে কাঁদতে দেখলে কারই বা ভালো লাগে ?
মাহিন : কাঁদছো কেন?
সায়নী : অনেক সুখ আমার,তাই সুখের ঠেলায় কান্না করতেছি।
মাহিন : পাগলি একটা তুমি। এভাবে কাঁদলে চোখের কাজল সব ছড়িয়ে যাবে। তখন পেত্নী পেত্নী লাগবে তোমাকে।
সায়নী : যাক ছড়িয়ে…. লাগুক পেত্নীর মতো তাতে তোমার কি?
মাহিন : ইস! আমার পাগলীটা এত রাগ করছে! তুমি তো পরীর মতো সুন্দর দেখতে। পেত্নীর মতো হয়ে গেলে আমার কি হবে ?
সায়নী : তোমার আর কি? কত মেয়ে আছে বরং আমি না থাকলেই ভাল। আমি তো শুধু শুধু ঝগড়া করি, ভুল বুঝি।
মাহিন : চুপ একদম… অনেক রাগ হইছে এবার তাকাও এইদিকে, দেখ তোমার পছন্দের বেলী ফুলের মালা।
সায়নী : আমার লাগবে না বেলী ফুল, যাও অন্য কারো খোঁপায় পড়াও।
মাহিন : ঠিক বলছো তো? আমি কিন্তু এবার সত্যি সত্যি অন্য কাউকে দিয়ে দিব, বলে উঠে দাঁড়ায়…
সাথে সাথে মাহিনের হাত ধরে কাছে টেনে নেয় সায়নী। গোলগোল চোখে সায়নীর দিকে তাকায় মাহিন। সায়নী হেসে ফেলে। কি সুন্দর ঐ হাসি ! মুক্তোদানার মত। শেষ বিকেলের আলোয় পরীর মতো সুন্দর ভালবাসার মানুষটার প্রাণখোলা হাসি মাহিনকে প্রচন্ড এক ভালো লাগায় আচ্ছন্ন করে। সন্ধ্যা হয়ে যায়। রাস্তার নিয়নবাতি গুলো জ্বলে ওঠে। সায়নীর হাতে বেলী ফুলের মালা। মাহিন ওর পাশাপাশি হাঁটছে। হাত ধরার চেষ্টা করতেই সায়নী চেঁচিয়ে ওঠে।
-হাত ধরবা না, আমাকে টাচ করবা না একদম। এইটা তোমার শাস্তি।
-আজব! আবার কি করলাম?
-এতক্ষণ যে একসাথে ছিলাম তখন একটা বারের জন্যেও কেন বলো নি আই লাভ ইউ ?

মাহিন দাঁড়ায়। সায়নীও দাঁড়িয়ে যায় সাথে সাথে। রাস্তার এই জায়গাটায় আলোআঁধারীর খেলা। নিস্তব্ধ, নিরিবিলি চারপাশ আশেপাশে মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে…. মাঝে মাঝে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। অন্ধকার কোণে কোনো এক প্রেমিক যুগলের বাড়াবাড়ি চোখের কোণায় ধরা পড়ে। সেদিকে পাত্তা দেয় না দুজনের কেউই। সায়নীর চোখের দিকে তাকায় মাহিন। কয়েক মূহুর্ত অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দুজন দুজনের দিকে।
তারপর মাহিন চিৎকার করে বলে ওঠে— ভালোবাসি তোমায় ‘সায়নী’ বড্ড বেশি ভালোবাসি।
-এই কথাটা এতক্ষণে বললেন উনি। ছোট্ট একটা কথা বলতে তার এত্ত সময় লাগে ? হুহ….
-আবার শুরু করলা তুমি ?
সায়নী প্লিজ আজকের মতো অভিমান বাদ দাও। – আমি যাই করি তাতেই তুমি বিরক্ত হও। কেন বুঝ না আমাকে ?
মাহিন আর কথা বাড়ায় না। ওর প্রচন্ড খারাপ লাগতে থাকে। চুপচাপ আবার হাঁটতে থাকে দুজন। সায়নী আলতো ছোঁয়ায় মাহিনের হাতটা ধরতে যায়। মাহিন থমকে দাঁড়ায়।সায়নী মাহিনের চোখের দিকে তাকিয়ে আবেগমাখা কণ্ঠে বলে ওঠে— “ভালবাসি তোমায়। ” অনেক বেশি ভালোবাসি ‘মাহিন’।

আরো ভালোবাসার গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন Valovashar golpo

1.6/5 - (41 votes)

তাসনিয়া তাবাসসুম

x