Shopnobilap
ইচ্ছে পরি

ইচ্ছে পরি

প্রতিদিন বিকেলের মত সেদিন বিকেলেও মোড়ের চায়ের দোকানে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিল আবির। এম.এ পাশ করে অনেক চেষ্টা করে চাকরি না পেয়ে হাপিয়ে উঠেছে। তাই বিকেলে চায়ের দোকানে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া আর কেরাম খেলা ছিল আবিরের প্রতিদিনের রুটিন। সেদিন বিকেলে বন্ধুদের সাথে গল্প করতে করতে হঠাৎ আবিরের চোখ পড়ে চায়ের দোকানের সামনে একতলা বাড়িটার বেলকুনির দিকে। বেলকুনিতে একটি মেয়ে এক রাশ খোলা চুল নিয়ে গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে আনমনা হয়ে বসে আছে। ঠিক তখনি আবিরের ছোট বোন আরোশি এসে দাঁড়ায় আবিরের পাশে। আবিরের এক বন্ধু শিশির বলে-কি রে আরশি তোর তো এস.এস.সি পরিক্ষা শেষ হলো তা তোদের রিজাল্ট কবে বের হবে? আরোশি শিশিরের কথার উত্তর না দিয়ে হাপাতে হাপাতে আবিরকে বলে- ভাইয়া তারাতারি বাড়ি চলো মা আবার অসুস্থ হয়ে গেছে। কথাটা শুনে আবির তারাহুরা করে আরোশির সাথে বাড়ি চলে গেল। শিশির বলে-আবিরের জন্য খারাপ লাগে ছেলেটা আর কত দিক সামলাবে।

সাহেদ- ঠিকি বলেছিস। ওর বাবা মারা যাবার পর থেকে সংসারের সব দায়িত্ব আবিরের ওপর এসে পড়েছে। কষ্ট করে পড়াশোনা শেষ করে এত চেষ্টা করছে কিন্তু একটা চাকরিও পাচ্ছে না। বাবার পেনশনের কিছু টাকা আর এক ব্যচ টিউশনি করে অসুস্থ মা আর বোন টাকে নিয়ে কোনো রকমে সংসার চালিয়ে নিচ্ছে। অথচ দেখ পাড়ার মধ্যে আবিরের মতো মেধাবি আর ভালো ছেলে দুইটা হয় না।
পরের দিন বিকেলে আবির এসে বসে চায়ের দোকানে। একে একে সব বন্ধুই এসে উপস্থিত হয়।

শিশির- কি রে আবির তোর মা এখন কেমন আছেন?
আবির- কাল ডাক্তরের কাছে নিয়ে গেছিলাম এখন আগের থেকে ভালো আছে।
সাহেদ- আন্টির ঠিক কি অসুখ?
আবির- মায়ের পেটে টিউমার হয়েছে। অনেক দিন আগেই ধরা পরেছে। ডাক্তার বলেছেন অপারেশন করাতে হবে। কিন্তু অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগবে। একটা চাকরির যোগার করতে পারলে খুব ভালো হতো।
হঠাৎ আবিরের চোখ পড়ে সেই একতলা বাড়ির বেলকুনিতে। আজও সেই মেয়েটি আনমনা হয়ে বসে আছে। কখনো মেয়েটি চেয়ে আছে আকাশের দিকে। কখনোবা নিস্তব্ধ বাতায়নের দিকে। চোখের দিকে তাকালে বোঝা যায় জমে আছে না বলা অনেক কথা। ঠোটের কোণে বিন্দু মাত্র হাসির রেখা নেই। মাঝে মাঝে চোখ থেকে ঝড়ে পড়ছে অশ্রু। আবির দেখছে আএ ভাবছে মেয়েটি এত অপরুপ দেখতে। ও কাদছে কেন ওর কি খুব কষ্ট? কি নাম ওর? এরকম বিভিন্ন কথা ভাবতে ভাবতে দেখে মেয়েটি বেলকুনি থেকে ভেতরে চলে গেল। পরের দিন বিকেলে চায়ের দোকানে বসে প্রথমেই আবিরের চোখ পড়ে সেই বেলকুনিতে। আজও সেই মেয়েটি বসে আছে। আবিরের ইচ্ছে হয় এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে। কিন্তু সংকোচ কাটিয়ে আবির যেতে পারেনা। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি ভেতরে চলে যায়। আবির প্রতিদিন বিকেলে চায়ের দোকানে গিয়ে সেই বেলকুনিতে একি দৃশ্য দেখে। একি দৃশ্য দেখতে আবিরের একটুও বিরক্ত লাগতো না। বরং মেয়েটি কে প্রতিদিন দেখতে আবিরের খুবই ভালো লাগতো। মেয়েটির অপরুপ চেহারা, নিশ্পাপ চোখ আবিরকে মুগ্ধ করতো। কিন্তু আবির সাহস করে ওর কাছে গিয়ে কথা বলতে পারতো না। আবির আগের মত আর বন্ধুদের সাথে কেরাম খেলত না। কারো সাথে বেশি গল্প করতো না। বসে বসে শুধু মেয়েটিকে দেখতো। এভাবেই কিছু দিন কেটে যায়। আরোশির রিজাল্ট বের হয়। আরোশি ভালো রিজাল্ট করে।
আরোশি- ভাইয়া আমার খুব ইচ্ছে ভালো একটা কলেজে পড়বো কিন্তু তাতে তো অনেক খরচ।
আবির- তোকে খরচের কথা ভাবতে হবে না। এখনো সময় আছে আমি ঠিক একটা ব্যবস্থা করব।
আবির বোনকে কথা গুলো বললো কিন্তু মনে মনে খুব চিন্তাতে পড়ে গেল। মায়ের অপারেশন করতে অনেক টাকা লাগবে আবার বোনের পড়াশোনার জন্যেও টাকা লাগবে। আবির যে কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা। সারাদিন হাজারো চিন্তা নিয়ে আবির যখন বিকেলে চায়ের দোকানে বসে সেই মেয়েটিকে দেখে মন যেন এমনি ভাল হয়ে যায়। আবির ভাবে আজ যে ভাবেই হোক ওর সাথে কথা বলবেই। আবির সাহস করে ওর দিকে এগিয়ে যায়।
আবির- আমি কি আপনার সাথে কথা বলতে পারি?
মেয়েটি- পারেন কিন্তু আমিতো আপনাকে চিনিনা।
আবির- আমি জানি আপনি আমাকে চিনেন না। আমিও আপনাকে চিনি না। শুধু কিছু দিন ধরে আপনাকে দেখেছি। আপনার নামই তো জানা হলোনা।
– আমার নাম সহজিয়া।
– আমার নাম আবির। আমি এই পারাতেই থাকি। আচ্ছা আপনি কি এইখানে নতুন এসেছেন আগে দেখিনি।
– আমরা একমাস ধরে এখানে এসেছি। আমার বাবা কলেজের প্রফেসর। এখান থেকে বাবার কলেজ কাছে হয় তাই এখানে আসা।
– আচ্ছা আপনি সব সময় মন খারাপ করে থাকেন কেন?
– আসলে বাবা মা দুজনই চাকরি করে তাই সারা দিন বাইরে থাকে। আমি একা একা বাসায় থাকি তাই মন খারাপ থাকে।
– আচ্ছা আমরা কি বন্ধু হতে পারি?
– পারি।

সেদিন থেকেই ওরা দুজন খুব ভালো বন্ধু হয়। ওরা প্রতিদিন কথা বলতো। সহজিয়া মাঝে মাঝে আবিরের সাথে আবিরের বাড়ি যেত ওর মাকে দেখতে। এইভাবেই কিছু দিন কেটে যায়। একদিন বিকেলে ওরা কথা বলছিল। সহজিয়া খেয়াল করে আবিরের মন খারাপ।
– কি হয়েছে তোমার মন খারাপ কেন?
– তুমি আমার পরিবারের বিষয়ে সবইতো শুনেছ। আরোশিকে ভরতির করতে অনেক টাকার দরকার আবার মায়ের শরিরও আস্তে আস্তে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না।
– চিন্তা করো না সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
– কি ভাবে হবে?
– আমি আরোশিকে নিয়ে বাবার সাথে কথা বলেছি। তুমি কাল আরোশিকে নিয়ে কলেজে যেও। বাবা সব ব্যবস্থা কিরে দেবে। আরশি যেন স্কলারশিপ নিয়ে পরতে পারে সে ব্যবস্থাও করে দেবে।
পরের দিন বিকেলে আবির সহজিয়ার সাথে দেখা করতে আসে।
– তোমাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না। তোমার জন্যই আমার বোনের স্বপ্ন পুরন হলো।
– তুমি তো আমার বেস্ট ফ্রন্ড। তোমার বোন তো আমারও বোন।
– কাল আমার সাথে এক জায়গায় যাবে?
– কোথায়?
– গেলেই দেখতে পাবে। আমি বিকেলে এসে তোমাকে নিয়ে যাব।
পরের দিন বিকেলে আবির এসে সহজিয়াকে নিয়ে যায়। সহজিয়া আবিরের সাথে গিয়ে একেবারে অবাক হয়ে যায়। আকা বাকা নদী , সিরি বাধা ঘাট, নদীর তিরে সারি সারি গাছ, ঘাটের পাশেই ফুলে ফুলে ভরে আছে জারুল গাছটা, নদীর ওপারে ছোট্ট গ্রাম, ঝাক বেধে পাখি উড়ে যাচ্ছে। সহজিয়া সেখানে গিয়ে খুব খুশি হয়।
আবির- এই জায়গা আমার খুব প্রিয় আমি মাঝে মাঝেই এখানে আসি।

– খুব সুন্দর জায়গা এখন থেকে আমিও আসব এখানে।
– চলো তরীতে উঠি।
– কিন্তু তরী বাইবে কে? আমরা ছাড়া তো আর কাউকেই দেখছি না।
– আমিই বাইব।
– কিন্তু ওখােন ফুল দিয়ে সাজানো কেন?
– আগে চল তারপর সব বুঝতে পারবে।
ওরা মাঝ নদীতে যায়। আবির সহজিয়ার সামনে কেক রেখে একটা নিল শাড়ি দিয়ে জন্ম দিনের শুভেচ্ছা যানায়।
– তুমি কি করে যানলে আজ আমার জন্মদিন আমিতো তোমাকে বলিনি।
– তোমার বাবার কাছে শুনেছিলাম। তুমি খুশি তো?
– আমি খুব খুশি হয়েছি। আমার সারা জিবন মনে থাকবে আজকের দিনটা।
তারপর ওরা কেক কেটে বাড়ির দিকে রওনা দেয়।

রাস্তায় দেখে সাহেদ আসছে।
আবির- কি রে সাহেদ কোথায় যাস?
সাহেদ- তোকেইই খুঁজতে যাচ্ছি। তোর মা আবার অসুস্থ হয়ে গেছে। আরোশি বার বার তোকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু তুই তো ফোন ধরছিস না। শিশির আর আরোশিকে হাসপাতালে আন্টির কাছে রেখে আমি তোকে খুজতে এসেছি।
আবির- আমি ভুল করে ফোনটা বাড়িতে রেখে আসছি। তুই সহজিয়াকে বাড়িতে রেখে আয় আমি হাসপাতালে যাচ্ছি।
সহজিয়া- না আমি হাসপাতালে যাব আন্টিকে দেখতে। বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেব।
আবির- আচ্ছা চলো।
হাসপাতালে বসে আরোশি খুব কাঁদছিল। সহজিয়া আরোশিকে বঝায়। ডাক্তার এসে আবিরকে বলেন- তোমার মাকে আজই অপারেশন করাতে হবে তানাহলে উনাকে বাঁচানো যাবে না। অপারেশন করাতে ৪০হাজার টাকা লাগবে। কি করবে তারাতারি সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে জানাও। আবির কি করবে কিছুই বুঝতে পারছিল না। এত অল্প সময়ে এতগুলো টাকা কোথায় পাবে।
সহজিয়া- আবির তুমি অপারেশনের ব্যবস্থা করতে বলো। আমি বাবাকে ফোন করে এখনি টাকা নিয়ে আসতে বলছি।
আবির- না সহজিয়া তা হয় না। আমি তোমার কাছে থেকে এত গুলো টাকা নিতে পারবো না।
সহজিয়া- ডাক্তার কি বললেন তুমি শোনোনি। যে ভাবেই হোক এখন আন্টিকে বাচাতে হবে। টাকা গুলো না হয় ধার হিসেবেই নাও চাকরি পেয়ে পরে আমাকে দিয়ে দিও।
আরোশি- তুমি আর অমত করোনা ভাইয়া। যে ভাবেই হোক মাকে বাচাও।
আবির-ঠিক আছে।
আবিরের মায়ের অপারেশন হয়ে যায়। ৫দিন পর উনাকে বাড়ি নিয়ে যায়। আবিরের মা সুস্থ হয়ে যায়। সহজিয়া প্রতিদিন আবিরের মাকে দেখতে যায়। আবিরের মাও সহজিয়া কে খুব ভালবাসে।
কয়েক দিন পর আবির সহজিয়া কে বলে আমি সেনাবাহিনীর চাকরির জন্য দরখাস্ত করেছি। ছোট থাকেই আমার স্বপ্ন সেনাবাহিনী হবো। কাল চাকরির জন্য পরিক্ষা দিতে যেতে হবে। যদিও চাকরি টা হবে না।

– কেন হবে না? তোমার তো যোগ্যতা আছে।
– এখন আর শুধু যোগ্যতা দিয়ে চাকরি হয় না টাকা লাগে।
– আগে তো পরিক্ষা টা দিয়ে আসো। আমার মন বলছে তোমার চাকরি হবে। যদি তোমার চাকরিটা হয়ে যায় তাহলে আমাক কি দিবে?
– তুমি যা চাইবে তাই দেবো। বলো তোমার কি চাই?
– সময় হলে চেয়ে নেবো।
আবির পরিক্ষা দিতে যায়। অফিসার বলেন, তোমার কাগজ পত্র সব আমি দেখেছি। তোমার চাকরি হয়ে গেছে।
– কিন্তু স্যার রিজাল্টতো দুদিন পর দেওয়ার কথা ছিল।
– ঠিকি শুনেছো কিন্তু তোমার চাকরি নিশ্চত। তার দুইটা কারন আছে।
– কি কারন?
– প্রথমত, তুমি চাকরিটার জন্য যোগ্য। দ্বিতিয়,সহজিয়া আমার ভাগ্নি। গত রাতে সহজিয়া ফোনে তোমার কথা আমাকে বলেছে। ৫দিন পর এসে চাকরিতে জয়েন্ট করবে। প্রথম ৬মাস ট্রেনিং। ট্রেনিং অবস্থায় ছুটি নেই। এমনকি ফোনও ব্যবহার করতে পারবে না।

বাড়ি ফেরার সময় আবির সহজিয়া কে ফোন করে বলে কাল সকালে নদীরর ঘাটে দেখা করতে। সকালে আবির নদীরর ঘাটে গিয়ে দেখে সহজিয়া এসে বসে আছে। আবির গিয়ে সহজিয়ারর পাসে বসে।
– নতুন চাকরির জন্য অনেক শুভেচ্ছা।
– ওখানকার অফিসার তোমার মামা ওনাকে তুমি আমার কথা বলেছো সে সব কিছু আমাকে বলোনি কেন?
– তোমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য বলিনি।
– আমার আর আমার পরিবারের জিবন তুমি নতুন করে সাজিয়ে দিলে। আমি তোমার কাছে ঋণি।
– এইভাবে বলে পর করে দিচ্ছো?
– তুমি আমার খুব কাছের একজন। আচ্ছা আমার চাকরিটা তো হয়েই গেলো এখন বলো তোমার কি চাই।
– এখনো সময় হয়নি আগে ট্রেনিং শেষ করে আসো তারপর বলবো।
– ট্রেনিং অবস্থায় তোমাদের কারো সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবো না। তোমাদের ছাড়া ৬টা মাস কি করে থাকবো।
– আমাদেরও তোমাকে ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হবে কিন্তু থাকতে হবেই।

– হুম। তুমি হলে আমার জিবনের ইচ্ছে পরি।
– ইচ্ছে পরি? অনেক পরিরর কথাই তো শুনেছি কিন্তু এই পরির কথা কখনোই তো শুনিনি।
– এটা ইচ্ছে পুরন করার পরি। ছোটো বেলায় মায়ের কাছে গল্প শুনেছি। যারা খুব গরিব ইচ্ছে পরি তাদের কাছে গিয়ে তাদের সব ইচ্ছে পুরন করে। গল্পের ইচ্ছে পরি তো কাল্পনিক। কিন্তু আমার জিবনের ইচ্ছে পরি বাস্তবের ইচ্ছে পরি। তুমি ইচ্ছে পরির মত আমার জিবনে এসে আমার সব ইচ্ছে পুরন করে দিয়েছ। তোমার জন্যেই আমার বোনের স্বপ্ন পুরোন হয়েছে। আমার মা সুস্থ হয়েছে। আমি চাকরি পেয়েছি।তাই তুমি হলে আমার জিবনের ইচ্ছে পরি। আমার জিবনে শুধু আর একটা ইচ্ছে বাকি আছে। আমি জানি আমার ইচ্ছে পরি সেই ইচ্ছেও পুরন করবে।
– কি তোমার সেই ইচ্ছে?
– আগে ট্রেনিং থেকে ফিরে আসি তারপর বলবো।
৫দিন পর আবির সবার সাথে দেখা করে ট্রেনিং এ চলে যায়। সহজিয়া আবার আগের মত সেই একা হয়ে যায়। মন খারাপ করে বেলকুনিতে বসে থাকে। অন্যদিকে আবির সারা দিন ব্যস্ততায় থেকেও সব সময় মনে মনে সহজিয়ার কথা ভাবে।
৬মাস পর আবিরের ট্রেনিং শেষ। এবার সব অপেক্ষার পর বাড়ি ফেরার পালা। এতদিন পর সবার সাথে দেখা হবে। ইচ্ছে পরির কাছে নিজের শেষ ইচ্ছের কথা বলবে। শেষ ইচ্ছে হল সহজিয়াকে জিবন সঙ্গী হিসেবে পাওয়া। নিশ্চই সহজিয়াও তাই চাইবে।
ট্রেনে বসে এই সব ভাবতে ভাবতে আবির বাড়ি চলে আসে। মা আর বোনের সাথে দেখা করে। মাকে সহজিয়ার কথা জিজ্ঞাসা করে। মা বলে- সবে ফিরলি আগে হাত মুখ ধুয়ে কিছু খেয়েনে।
আবির- না মা আগে সহজিয়ার সাথে দেখা কিরে আসি তারপর খাব।
আবির সহজিয়ার বাসায় যায়। সহজিয়ার মা দরজা খুলে।
আবির- আন্টি কেমন আছেন?
সহজিয়ার মা- ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?
আবির- ভালো আছি। সহজিয়া কি বাসায় আছে?
সহজিয়ার মা- আমার সাথে এসো।
তারপর আবিরকে পিছনের বাগানে নিয়ে যায়।
আবির- আন্টি এখানে নিয়ে আসলেন কেন সহজিয়া কোথায়?
সহজিয়ার মা কিছু না বলে হাত দিয়ে ইশারা করে সামনে তাকাতে বলে। আবির তাকিয়ে দেখে নতুন একটা কবর। সহজিয়ার মা কাঁদতে কাঁদতে বলে- এটা সহজিয়ার কবর।
আবির- আন্টি আপনি কি সব আজে বাজে কথা বলছেন।
সহজিয়ার মা- আজে বাজে নয় বাবা এটাই সত্যি। সহজিয়া আর বেচে নেই।
এক নিমিষেই যেন আবিরের চোখের সামনে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে। কিছুতেই আবির বিশ্বাস করতে পারছিল না।
সহজিয়ার মা আবিরকে একটা চিঠি দিয়ে বলে- সহজিয়া মারা যাওয়ার আগে এই চিঠিটা তোমাকে দিতে বলেছিল। চিঠিটা দিয়ে সহজিয়ার মা ভেতরে চলে যায়। আবির কাঁদতে কাঁদতে কবরের পাশে বসে। ইচ্ছে পরি আবিরের শেষ ইচ্ছে পুরন না করেই চিরতরে চলে গেল। আবির কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। আবির সহজিয়ার চিঠিটা পড়তে শুরু করে।

প্রিয় আবির,
এই চিঠিটা যখন তুমি হাতে পাবে তখন আমি তোমাদের ছেরে অনেক দুরে থাকবো। যেখান থেকে আর ফিরে আসা যায়না। আবির তোমাকে কখনো বলিনি দুই বছর আগেই আমার ক্যান্সার ধরা পরেছিল। ডাক্তার বলেছিলেন আমি যেকোনো দিন মারা যেতে পারি। এই জন্যেই আমি মন খারাপ করে বেলকুনিতে বসে থাকতাম। তুমি আমার মৃত্যুর কথা ভুলিয়ে আমাকে হাসি আর আনন্দ এনে দিয়েছিলে। তুমি মুখে না বললেও আমি জানি তুমি আমাকে ভালবাস। আমিও তোমাকে খুব ভালবাসি। ইচ্ছে করেই আমার মরনব্যাধির কথা তোমাকে আগে জানাইনি। কারন আমি জানতাম তুমি শুনলে সহ্য করতে পারতে না। আমাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে। নিজের স্বপ্নগুল পুরন করতে পারতে না। আমি চেয়েছিলাম তোমার সাথে একটা সুস্থ স্বাভাবিক বন্ধুত্ত্ব রাখতে। তোমাকে বলেছিলাম তোমার ট্রেনিং শেষ হলে তোমার কাছে কিছু চেয়ে নেবো। আজ তা চাইবো। তুমি নদীর ঘাটে যেভাবে আমার জন্মদিন পালন করেছিলে সেভাবেই প্রতি বছর পালন করবে। যদিও আমি থাকবো না তবুও দুর থাকেতো দেখবো। আমি জানি তুমি আমার এই ইচ্ছে পুরন করবে। আমি জানতাম তুমি তোমার শেষ ইচ্ছে হিসেবে আমাকেই চাইতে কিন্তু তোমার ইচ্ছে পরি তোমার সেই ইচ্ছে পুরন না করেই চলে গেলো। আমি জানি তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে। তবুও নিজেকে শক্ত করো। আমাকে কথা দাও দুর্বল হয়ে পরবে না।জিবনে অনেক বড় হবে। আমার ভালবাসা সব সময় তোমার সাথে থাকবে। আমি দুর আকাশ থেকেই তোমার সাফল্য দেখে আনন্দিত হব। নিজের খেয়াল রেখো। প্রার্থনা করি খুব খুব খুব ভালো থাকো।
ইতি
তোমার ইচ্ছে পরি

আবির চিঠিটা বন্ধ করে দুহায় দিয়ে চোখের পানি মুছে ফেলে। সহজিয়ার কবরে হাত রেখে বলে- তোমার সব কথাই আমি রাখবো ইচ্ছে পরি। হাজার কষ্ট হলেও আমি নিজেকে দুর্বল করবো না। আমি যেখানেই থাকি তোমার জন্মদিনে ঠিক চলে আসবো। আমার ইচ্ছে পরির শেষ ইচ্ছে আমি পুরন করবো।

আরো ভালোবাসার গল্প পড়ুন এখানে!

5/5 - (1 vote)

Mehzabin Afroz Urmi

আমি মেহজাবিন, এখনো পড়াশোনা করি নিজের একটা পরিচয় করবো বলে । নাটোর জেলার গুরুদাসপুর থানার ছোট্ট একটা গ্রামে আমার বসবাস । লেখালেখির হাতে খড়িটা ঠিক কবে হয়েছিলো আমার মনে নেই, তবে লিখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে, আর সারাক্ষন মাথার মধ্যে কিছু না কিছু একেই চলে । তাই যখনি অবসর সময় পাই তখনি মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাওয়া শব্দ গুলোকে পরিপূর্ণ রূপ দেয়ার চেষ্টা করি ।

x