Shopnobilap
ভালো থেকো আলিবাবা
ভালো থেকো আলিবাবা

ভালো থেকো “আলিবাবা”

ফেইসবুক এ আমি তাকে “আলিবাবা” বলেই ডাকি, আসলে তার নাম নীলা! নীলা কিভাবে যে আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ড লিষ্ট এ চলে আসছিলো তা আমি জানিনা। আর তা জানার চেষ্টাও করিনি, মাঝে মাঝে ওর পোষ্টে লাইক দিতাম কিন্তু কোনো কমেন্ট করতাম না। নীলার ফেইসবুক প্রোফাইল ঘেটে দেখেছিলাম ও আমাদের এলাকার মেয়ে, তারপরও তেমন কোনো আগ্রহ দেখায়নি। আমি আমার কাজ নিয়েই ব্যাস্ত থাকতাম, তাই তাকে নিয়ে বিশ্লেষণ করার তেমন কোনো সময় পাইনি। কিছুদিন পর একদিন দেখি মেয়েটা আমাকে ইনবক্স করেছে। তখন একটু একটু ভাবতে শুরু করলাম, সত্যি কি এই মেয়েটা আমার পরিচিত কেউ বা আমাকে আগে থেকেই চেনে এরকম কিছু।
_ Hi
_ Hello!
_ kemon achen?
_ Valo, But Do you know me?
_ No. Tense ta vol asa.

আমি অবাক হলাম, মেয়েটা আমাকে চেনে না কিন্তু আমার সাথে খুব সহজ ভাবেই কথা বলছে। যেটা ফেইসবুক এ এর আগে কখনো আমার সাথে ঘটেনি। আমাদের পরিচয় পর্বটা শেষ হওয়ার পর আমি ওকে “আলিবাবা” বোলাতে ও একটু চোটে গেছিলো, কিন্তু আমি যখন বললাম তোমাকে আলিবাবা বলে ডাকতেই আমার ভালো লাগছে তখন আর বাঁধা দেয়নি। তারপর থেকেই আমি ওকে আলিবাবা বলেই ডাকি! আমি ওর সাথে যতই কথা বলছি ততোই অবাক হচ্ছি, আশ্চর্য রকম এক ভালো লাগা কাজ করছিলো আমার ভেতর! আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না, কেনো জানি বার বার মনে হচ্ছিলো নীলার সাথে অন্তত একটু কথা বলি। যদিও আমাদের সব কথাই ফেইসবুক মেসেঞ্জার এর মাধ্যমে হতো, কিন্তু তারপর ও ভালো লাগতো! কোনো কিছু বোঝানোর জন্য ওকে খুব বেশি কথা বলা লাগতো না, অল্প কথাতেই ও বুঝে যেতো। যেকোনো অপরিচিত মানুষকে অল্প সময়ের মধ্যেই আপন করে নেয়ার মতো দারুন এক গুন্ আছে ওর মধ্যে! একটু জিদ আছে কিন্তু খুব বেশি অভিমান করে না। কেউ যদি তাকে অপমান করে বা আঘাত দিয়ে কথা বলে তাহলে তার সাথে আর কখনোই ভাব করেনা ও তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। এতো সব কিছু জেনেছি ওর সাথে কথা বলে, কিছু না জিজ্ঞাসা করেই। কিন্তু নীলার সম্পর্কে আমার আরো জানতে ইচ্ছা করছিলো, কারণ ওর সম্পর্কে যতই জানছি ততোই ওর প্রতি আমার ভালো লাগা আরো বেড়ে যাচ্ছিলো! তাই ওকে অনেক প্রশ্ন করা শুরু করলাম। কিন্তু আমার প্রশ্নে ও অনেক বিরক্ত বোধ করছিলো, এতটাই বিরক্ত হচ্ছিলো যে আমাকে ব্লক করে দেওয়ার কোথাও বলেছিলো। পরে বুঝলাম ওর রাগ হওয়া টা স্বাভাবিক ছিলো, কারণ আমি এতটাই আগ্রহ দেখিয়ে ফেলেছি যে প্রশ্ন করতে করতে ওর উচ্চতা কত? ওজন কত? গায়ের রং কেমন? এইসব প্রশ্ন ও করে ফেলেছি। আর একজন অপরিচিত মানুষ যখন কোনো মেয়েকে এই ধরণের প্রশ্ন করে তখন তার রাগ হওয়া টাই স্বাভাবিক! এতে ওর ব্যাক্তিত্বটা আমার কাছে পরিষ্কার হলো, যেটা আমার ভালো লাগাকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছিলো!

নীলার সাথে কথা বলার কিছু দিন মধ্যেই আমি বুঝতে পারলাম ওর একটা চাপা কষ্ট আছে যা ও কারো সাথে শেয়ার করে না। আমার মনে হচ্ছিলো ও একটা ছেলেকে পছন্দ করে কিন্তু কোনো একটা কারণে ওদের সম্পর্কটা ঠিক নেই বা সম্পর্কটা কখনো হয়েই ওঠেনি! যদিও সবটাই আমার ধারণা ছিল, কিছুই জিজ্ঞাসা করিনি। কিন্তু মজার বেপার হলো ওকে সরাসরি কিছু জিজ্ঞাসা করা লাগতো না, অল্প একটু বললেই বুঝে ফেলতো কি জানতে চাচ্ছি!
(ফেইসবুক মেসেঞ্জার চ্যাট)
_ তোমার কি মন খারাপ?
_ না তো
_ কিছু নিয়ে টেনশনে আছো?
_ নাহ….
_ কারো জন্যে কি কষ্ট পাচ্ছ?
_ আমার কপাল টাই খারাপ, সে কেনো আমাকে বোঝে না?
সে দিনই প্রথম জানতে পারি ও আসলে একটা ছেলে কে ভীষণ পছন্দ করে, আর ভালোও বসে! কথাটা শুনে আমার কেনো জানি অনেক কষ্ট লাগছিলো। আমার মনে হচ্ছিলো আমি কিছু একটা হারিয়ে ফেলতেছি! কষ্ট হলেও পুরো বেপার টা জানতে ইচ্ছা করছিলো। নীলা সবটা বলেও দিলো, কিন্তু সবটা সোনা পর আমার মনে মনে একটু আনন্দ হচ্ছিলো এই ভেবে যে নীলার ভালোবাসাটা ছিলো এক তরফা, ছেলেটা জানতোও না যে কেউ একজন তাকে অনেক পছন্দ করে! তবে ওদের প্রতিদি ই কথা হতো। আমার আনন্দ টা খুব বেশিক্ষন থাকলোনা, কারণ নীলা আমাকে বলেছিলো যে ওই ছেলেটাকে আমি এতটাই ভালোবেসে ফেলেছে যে এ জীবনে ওই ছেলে ছাড়া আর অন্য কোনো ছেলে কে ভালোবাসতে পারবো না। আমি আর বিশেষ কিছু বলতে পারিনি, একবার ভেবেছিলাম আমি আর ওর সাথে কথাই বলবো না কিন্তু পরে আর থাকতে পারিনি।

এর মধ্যে আমাদের ফোন আলাপ ও হয়ে গেছে, এখন আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক আগের থেকে আরো মজবুত, আমরা তুমি থেকে তুই এ নেমেছি। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছিলো ওর প্রতি আমার ভালোলাগা ততোই আরো বাড়ছিল। কেনো জানি ওর ওপর আমার একটা মায়া পরে গেছে! এক দিন আলিবাবা আমাকে বললো ও যে ছেলে কে পছন্দ করে ওই ছেলেটার সাথে নাকি কি একটা প্রব্লেম হয়েছে, ওদের দুজনের আর কথা চলছে না। এইটা শুনে তো আমার মন আনন্দে নাচঁতে শুরু করলো, যদিও নীলা কে বলেছিলাম টেনশন করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আমার খুশি দেখে কে? নীলার মন অনেক খারাপ ছিলো, তাই সেদিন রাতে আর খুব বেশি কথা হয়নি। কিন্তু আমি বেশি সময় নিলাম না, পরের দিনই আমাদের স্বাভাবিক কথার মাঝেই খুব সহজেই বলে দিলাম, আলিবাবা আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি আর আমি তোমাকে বিয়েও করতে চাই! কথাটার ভেতর হয়তো খুব বেশি সিরিয়াস ভাব ছিলোনা, তবে আমি মনে হয় ওকে ভালো ভাবেই বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি তাকে আমার জীবন সঙ্গিনী বানাতে চাই! কিন্তু আমার শেষ আশায় পানি ঢেলে দিলো নীলা, খুব জোর গলায় জানিয়ে দিলো যে আমি যা ভাবছি তা কোনো দিন ও ওর পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব না। কেনো জানতে চাওয়ায় ও বললো আমার অনেক দিনের স্বপ্ন, আমার বড় অনেক লম্বা হবে। যে স্বপ্নের সাথে আমি একদমই যাই না। নীলা আমাকে কি বোঝাতে চাইলো তা আমি কিছু বুঝিনি, শুধু এতটুকুই বুঝলাম যে আমার স্বপ্ন টা এখানেই শেষ হলো!

আমার কপাল ভালো, আলিবাবা আমার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা আজ নষ্ট করেনি, তাই এখনো আমাদের কথা হয়। পৃথিবী টা কি আজব, যা ইচ্ছা স্বপ্ন দেখা যায় কিন্তু তা পাওয়ার আশা করতে নেই, তাহলে কষ্টের সাগরে ডুবতে হয়! একবার নীলা আমাকে জিজ্ঞাস করেছিল, আমি হঠাৎ করে ওকে প্রপোস কেন করেছিলাম? আমাদের তো তখনো দেখাই হয়েছিলোনা? উত্তরে আমি বলেছিলাম আমার জীবনে হঠাৎ করে পাওয়া সবকিছুই মঙ্গলকর ছিল, তাই আমার ভালোবাসাটাও আমি হঠাৎ করেই পেতে চেয়েছিলাম। আমি আজও চেষ্টা করে যাচ্ছি, তবে আলীবাবাকে কাছে পাওয়ার জন্য না বরং ওকে ভুলে থাকার জন্য। যদিও কাজটা আমার জন্যে অনেক কঠিন ও কষ্টের তবুও আমাকে পড়তেই হবে। কারণ আমি হয়তো এখন আর স্বপ্ন দেখিনা, কিন্তু একজনের স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব নিয়েছি! যার মাঝে আলীবাবাকে খুজেঁ নিয়ে ভালো থাকার চেষ্টা করবো!

একটা প্রশ্ন, আমি কেনো আলিবাবার পছন্দের মানুষ হতে পড়লাম না? আমার শারীরিক গঠনের জন্য কি সত্যি আমি দায়ী ছিলাম? সবি তো সৃষ্টি কর্তার ইচ্ছা, এতে আমার কি দোষ ছিলো? কোনো উত্তর নেই! আমি নীলার ভালোবাসা ও ইচ্ছা কে অনেক সম্মান করি তাই আর জোর করিনি। কারণ সেই পুরোনো কথাটা আমি জানতাম, জোর করে কখনো ভালোবাসা পাওয়া যায়না! ভালো থেকো আলিবাবা, ভীষণ ভীষণ ভালো থেকো! জীবনে অনেক সুখী হওয় পছন্দের মানুষটাকে নিয়ে!

Thanks for Recommend!

Nafis Ahamed

x