Shopnobilap
সেলিম ও সিগারেট
সেলিম ও সিগারেট | Shopno Bilap

সেলিম ও সিগারেট

ক্লাস শেষ, স্যার চলে যেতেই আমি উঠে গিয়ে সেলিমের কাছে বসলাম। ওর গা থেকে সিগারেটের বাজে গন্ধ আসছিলো, মনে হচ্ছে এইমাত্র সিগারেট করে শেষ করেছে। সেলিম, আমার সব থেকে কাছের বন্ধু! আমরা একসাথে প্রাইমারি, স্কুল, আর এখন কলেজে ও পড়ছি। আমরা যখন ক্লাস নাইন এ পড়ি তখন থেকেই সেলিম সিগারেট ধরেছে। কারণ কি ছিল কিছুই জানিনা, তবে ও বলছিলো ওর নাকি কি একটা কষ্ট আছে যার জন্যই সিগারেট দরকার হয়, যদিও আমার কাছে ওর ওই কষ্টের কোনো লজিক নাই তও নিষেদ করিনা। সিগারেট খাওয়াতে সেলিমের একটা স্টাইল আছে, যেটা আমার খুব ভালো লাগে। সেলিম ঠোঁটের কোনার একটু সামনে সিগারেট টা হালকা করে চেপে রাখে, মনে হয় এই পরে যাবে যাবে কিন্তু পরেনা। তারপর ডান হাতে দেশলাইতে আগুন জানায় আর বাম হাত দিয়ে আড়াল করে ধরে। এরপর সুন্দর করে মাথাটা একটু বাঁকা করে সিগারেট টা আগুনের সামনে নেয়, শক্ত করে ভেতরের দিকে একটানে সিগারেট টা জ্বালিয়ে নেয় আর ঠোঁটের অন্য পার্স দিয়ে ধোঁয়া ছারে। তখন সেলিমের চোখে মুখে অনেক আরাম আর শান্তির ছায়া ফুটে ওঠে।

সেলিম বেশ খানিকটা লম্বা, স্বাস্থও মোটামুটি ভালো। গায়ের রং ফর্সা, মাথায় বোরো বোরো চুল, ঝাঁকড়া কিন্তু কোঁকড়ানো না। ওর সবকিছুতেই আলাদা একটা স্টাইল আছে, কথা বোলাতে, চলাফেরা ও হাত পা নাড়ানোতে, এমনকি পোশাকআশাকে ও। সেলিম যখন কোনো এক উঁচু জাগায় এক পা তুলে বসে, আর হাতের দু-আঙ্গুল এর মাঝখানে সিগারেট এর মাঝ বরাবর ধরে ঘার বাঁকা করে টানে ঠোঁট চেপে ধোঁয়া ছারে তখন ওকে দেখতে বলিউড ছিনেমার হিরো হিরো মনে হয়। সেলিমের এই স্টাইল টা আমার এতই ভালো লাগে যে আমিও দু একবার এইমতো করার চেষ্টা করেছি, সবই ঠিক ছিলো কিন্তু যখনি সিগারেটে টান দিতাম তখনি আমার ভীষণ কাশি হতো। আমার এই আনাড়ি কাজ দেখে সেলিম হা হা হা করে হেসে উঠতো!

সেলিম কিছুদিন হলো আমার সাথে ভালোভাবে মিসছেনা, ওর কথাবাত্রাও কেমন যানি বদলে গেছে। আমি কিছুতাই বুঝে উঠতে পারছিনা ও আমার সাথে কেন এমন করছে? কাল রাতে অর্পা বললো ওর সাথেও নাকি অনেক খারাপ হেবহার করেছে সেলিম। সেলিম আর অর্পার একটা সম্পর্ক আছে, যদিও আমরা ফ্রেন্ড একেই সাথে পড়াশোনা করি তারপরও ওদের ভেতর একটা ভালোবাসার সম্পর্ক সৃষটি হয়েছে। সেলিম অনেক আগে থেকেই অর্পাকে পছন্দ করতো, কিন্তু অর্পার এই বিষয়ে তেমন কোনো আগ্রহ ছিলোনা তাই অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অর্পাকে রাজি করিয়ে ছিলাম। তবে এখন মনে হচ্ছে অনেক ভুল করে ফেলেছি।

সেলিম এখন আর আগের সেলিম নাই, ওর ভেতরে বাহিরে আকাশ পাতাল বদলে গেছে। সেই স্ট্যালিস্ট আর গোছালো ছেলে টা এখন ছন্নছাড়া আর এলোমেলো হয়ে গেছে, ভদ্র ছেলেটা এখন কোথায় কোথায় সবার সাথে রাগারাগি করছে, অনেক রাত করে বাসায় ফিরছে, পড়াশোনায় তো আর একটুও মনোযোগ নাই, সবার থেকে কেনজানি নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। ওর চোখের নিচে কালো দাগ হয়ে গেছে। বোঝাই যাচ্ছে অনেক রাত সে ভালো মতো ঘুমায়নি। আমি ভাবছিলাম সেলিম হয়তো বড়ো কোনো এক প্রব্লেম এ পড়েছে, যা কারো সাথে শেয়ার করতে পারছেনা। কিন্তু আমি সত্যি ভীষণ অবাক হলাম যখন জানতে পারলাম সেলিম এখন নিয়মিত নেশা করছে। পাড়ার সবথেকে বাজে বাজে ছেলেদের সাথে মিশছে। আমার কিছুতেই মাথায় আসছেনা সেলিম কেন এইসব করছে? আর কেনই বা ওই বোকেযাওয়া ছেলেদের সাথে মিশছে। ওই ছেলে গুলা ভীষণই খারাপ, সব ধরণের কুকর্মই করে আর সারাদিনরাত তো নেশা নেয়ার ওপরই থাকে। সেলিম তো সবই জানতো, তাহলে কেন? অর্পার সাথেও তো কোনো প্রব্লেম হয়নি।

সেলিম নেশা ছাড়তে পারেনি, আর আমি সেলিমকে। আজ চার হয়ে গেছে অনেক বুঝিয়েছিলাম, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আজও কোনো কারণ জানা যায়নি কেন সে এই নেশা করা টা শুরু করেছিল? আর কেনই বা এখনো করছে? শুধু এতটুকুই বলেছে যে ভালো লাগে তাই করে আর অনেক চেষ্টা করেও ছাড়তে পারছে না। অর্পার বিয়ে হয়েগেছে, ও এই সেলিমকে মেনেনিতে পারেনি, আর কেউ তা পারবেও না। তারপর থেকে সেলিম আরো বেশি নেশা করেছিলো। সবথেকে বেশি কষ্ট পাচ্ছে সেলিমের বাবা মা, তাদের একমাত্র ছেলে নেশার ফাঁদে পরে আজ হসপিটাল এর বেডে মৃত্যুর জন্য দিন গুনছে। সেলিমের ক্যান্সার, আর খুব বেশি দিন বাচঁবেনা। পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যাবে ওপারে। হারিয়ে যাবে সেলিম আমাদের মাঝ থেকে!!!!

5/5 - (1 vote)

Nafis Ahamed

x