আজ অনেক দিন পর নীলার কথা মনে পড়ছে, নীলা ও তার পরিবার এই শহরেরই এক কোনে বাস করতো। খুব হাসি-খুশি মিষ্টি একটা মেয়ে নীলা! হাজারো ইচ্ছা আর স্বপ্ন ভাসতো নীলার চোখের তারায়, কিন্তু নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারে মেয়ে হওয়ার জন্য কোনো ইচ্ছাই পূরণ হতো না তার, নীলার এক মাত্র কাছের মানুষ ছিল তার বোন। পড়াশোনা করতে ভীষণ ভালোবাসতো নীলা, কিন্তু অভাবের সংসারে ভালো ভাবে পড়াশোনা করাটা অনেক কষ্টকর ছিলো নীলার জন্য। বাড়ির পাশের একটা সরকারি স্কুলে ভর্তি হয় নীলা, মনে অনেক স্বপ্ন ভালো করে পড়াশোনা করে বোরো হয়ে পরিবারের অভাব মেটাবে লিনা। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় স্কুল ড্রেস, নীলার নতুন স্কুলে স্কুল ড্রেস ছাড়া পড়াসোনা করতে দিতোনা, কিন্তু নীলার কাছে কোনো স্কুল ড্রেস ছিলোনা আর নতুন স্কুল ড্রেস বানানোর মতো টাকাও ছিল তার পরিবারে। তাই সাধারণ পোশাকেই নীলা স্কুলে যেতে থাকে। খুব তাড়াতাড়িই নীলার এই স্কুল ড্রেস ছাড়া স্কুলে আসাটা ম্যাডামের চোখে পড়েযায়, নীলাকে ডেকে নিয়ে অনেক বকাঝকা করে ম্যাডাম! আর বলে দেয় কাল থেকে স্কুল ড্রেস নাপড়ে আসলে নীলাকে আর স্কুলে ঢুকতে দিবেনা এবং স্কুলের খাতে থেকে ম্যান কেটে দেবে। valobashar onuvuti
নীলা বাড়িতে আসে ওর আম্মার কাছে অনেক বায়না করে একটা নতুন স্কুল ড্রেস বানিয়ে দেওয়ার জন্য। তার মা অনেক মন খারাপ করলো, কারণ নতুন ড্রেস কিনে দেওয়ার মতো অবস্থা ছিলোনা তখন। নীলা লুকিয়ে লুকিয়ে অনেক কাঁদতো কারণ একটা স্কুল ড্রেস আর অভাবে তার স্কুলে যাওয়াটা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। পড়াশোনার প্রতি নীলার এত আগ্রহ দেখে নীলার এক ফুফাতো বোন তার পুরাতন একটু ছেড়া একটা স্কুল ড্রেস দেয়, এবং নীলার এক প্রতিবেশীও একটি স্কার্ফ দেয় পড়ার জন্য। নীলার মা ওগুলো সেলাই করে পড়ার উপযোগী করে তৈরী করলো, তারপর থেকে নীলা ওই পুরাতন স্কুল ড্রেস পরেই মনের আনন্দে স্কুল যেতে শুরু করে।
কিন্তু খুব বেশি দিন নীলার এই আনন্দ থাকলোনা, পুরাতন স্কুল ড্রেসটা খুব যত্ন সহ ব্যবহার করলেও তা বেশি দিন টেকেনি, অল্প একটু ছিড়ে যাওয়াতে নীলার মনে চিন্তার কালো অন্ধকার নাম, এই শেষ সম্বলটাও যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে নীলার স্কুলে যাওয়া আবারো বন্ধ হয়ে যাবে! তবে নীলা অনেক সাহসী একটা মেয়ে, পিঠের ছেড়া অংশটা ওড়না দিয়ে ঢেকে নিয়মিত স্কুলে যেতো। বেশ কিছু দিন পরে একদিন স্কুল ছুটির পর বাড়ি ফেরার সময় নীলার ছেড়া জামাটা ওর বন্ধুরা দেখে ফেলে, নীলা বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও সবাই এইটা নিয়ে অনেক হাসাহাসি ও মজা করছিলো। নীলা কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফায়ার আসলো। নীলার মন অনেক খারাপ, বোরো বোন শিলা বুঝতে পারে যে নীলার কিছু একটা হয়েছে, জিজ্ঞাস করতে সব বলে দেয় নীলা। মনে মনে ভাবতে থাকে তার পড়াশোনা হয়তো এখানেই শেষ, তার হয় তো আর কোনো দিন স্কুলে যাওয়া হবেনা সব স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে! বোরো বোন শিলা ওকে অনেক বুঝিয়ে শান্তনা দেয় আর পুরোনো কাপড় দিয়ে তলী দিয়ে সেলাই করে ড্রেসটা আবারো পড়ার উপযোগী দেয়। ড্রেসটা পেয়ে নীলার মন আবারো খুশিতে ভোরে যায় এই ভেবে যে সে আবার স্কুলে যেতে পারবে পড়ালেখা করতে পারবে।
এভাবেই নীলার দিন কাটতে থাকে, নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সদস্য দেড় জীবনের বেশির ভাগ সময়টা অভাবের সাথে যুদ্ধ করতে করতেই কেটে যায়। নীলার মতো হাজারো মেয়ে প্রতি দিন তাদের ইচ্ছা, শখ, আল্লাদ গুলো প্রতি দিন কুরবানী দিয়ে আবার নতুন স্বপ্ন দেখে আর আশায় বেছে থাকে।
[গল্পটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে]
আরো জীবনের গপ্ল পড়ুন এখানে Jiboner golpo