বাবা,
বাবা আমি পরী, তোমার সেই ছোট্ট হারিয়ে যাওয়া পরী! তুমি কেমন আছো বাবা? অনেক ভালো আছো তাইনা? তোমার এই বেঈমান পরীটা তোমাকে এত কষ্ট দিয়েছে তাও তুমি কিভাবে ভালো আছো বাবা? তুমি কি এখনো আমাকে মাফ করোনি বাবা? জানো বাবা তখন আমি এক স্বপ্নের ভেতোর ছিলাম, এক নতুম ভালোবাসার পিছনে ছুটছিলাম। প্রতিদিন তোমার ওই ওতো ওতো ভালোবাসা পেতে পেতে ভুলেই গেছিলাম তোমার গুরুত্বটা। তুমি আমাকে এতো দিয়েছো যে ভালোবাসার অভাব কি তা বুঝতেই শিখিনি! তোমার ভালোবাসার জন্য আমি কখনো মাকেও মিস করিনি। মাকে যখন হারিয়ে ছিলাম তখন তো কিছুই বুঝতে শিখিনি, তোমার আঙ্গুল ধরে হাটতে হাটতেই খারাপ লাগা সময় গুলো পারকরে দিতাম। তোমার মনে আছে বাবা? একদিন কনকনে শীতের রাতে আমি অনেক বায়না করছিলাম আইস-ক্রিম খাওয়ার জন্য, তুমি আমাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করছিলে কিন্তু আমি কান্না করেই চলছিলাম। শেষে কোনো উপায় নাপেয়ে ওই রাতেই আমাকে নিয়ে গেছিলে আইস-ক্রিম কিনে দিতে, সেদিন আমি তোমার কোলে ঘুমিয়ে গেছিলাম, আইস-ক্রিম আর খাওয়া হয়নি। তোমার মনে আছে বাবা, তুমি যখন আমাকে পরী পরী বলে ডাকতে তখন আমি আমার ছোট্ট কণ্ঠে বলতাম এতো ডাকাডাকি করছো কেনো আমি কি হারিয়ে গেছি। সাথে সাথে তুমি আমাকে জড়িয়ে ধোরে বলতে তোকে কোথাও হারাতে দেবোনা মা, তুমি তো আমার পরী! ভীষণ মনে পড়ে সেই দিন গুলো বাবা! জানো বাবা আমি নাহ এখন কাঁদতে শিখে গেছি, বায়না করা ছাড়াই কান্না করি। শুধু ভাবি তোমার কাছে থাকতে চোখের জল এতোই জমিয়ে ছিলাম যে এখন আর শেষই হয়না।
তোমার খুব জানতে ইচ্ছা করে তাইনা বাবা? সেদিন কেনো আমি তোমাকে একা ফেলে একটা অচেনা অজানা ছেলের হাত ধোরে পালালাম? আমি যখন একটু একটু বড়ো হলাম আমার শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সাথে আমার মনেরও অনেক পরিবর্তন হয়ে যায়। আমার ভালো লাগা মন্দ লাগা আগের থেকে অনেকটাই বদলে যায়। আমার ভীষণ একা থাকতে ইচ্ছা করতো, কারো সাথে কথা বলতে ভালো লাগতো না। জানো বাবা, যেআমি তোমাকে জড়িয়ে নাধরলে আমার ঘুম আসতোনা সেই আমিই মনে মনে বিরক্ত হোতাম কখন তুমি আমার রুম থেকে চলে যাবে। এর মাঝে একদিন ওই ছেলেটা আমাকে ভালোবাসি বলে, ভালোবাসা মানে তো আমি শুধু তোমাকেই জানতাম কিন্তু ভালোবাসা মানে যে আরো অন্য কিছুও হতে পারে তা ওই ছেলেটাই আমাকে বুঝিয়ে দেয়। ওর সাথে কথা বলতে আমার ভালো লাগতো তাই একটু একটু করে তাকে আমি সময় দিতে থাকি, আমাদের ভেতর সম্পর্কটা আরো গভীর হতে থাকে। এক বছর পার হতেই নিজেকে অনেক বড়ো বলে মনে হতে থাকে। যানো বাবা, তোমার চোখ ফাঁকি দিয়ে আমি প্রায় প্রতি দিনই ওই ছেলেটার সাথে দেখা করতাম, একদিন ও আমাকে ওর এক বন্ধুর বাড়ি নিয়ে যায়, তুমি বাবা বলেই পরেরটা আর বলতে পারলামনা! যানো বাবা, তারপর থেকেই প্রতিটা রাত আমার দুঃস্বপ্নে কাটতে লাগলো, ভয়ে আমার গলা শুখিয়ে যেতো। আমি কেউকেই কিছু বলতে পারছিলনা, নিজের সাথে নিজেই যুদ্ধ করতে করতে সেই সময় টার সামনে এসে দাঁড়ালাম যখন আমি ভাবতে পারিনি আমার সমাজ নিয়ে, ভাবতে পারিনি আমার পরিবার নিয়ে, ভাবতে পারিনি আমার সবথেকে কাছের সবথেকে ভালোবাসার বাবা তোমাকে নিয়ে! আমার অবস্থা আমাকে বাধ্য করে সব কিছু ছেড়ে তোমাকে ছেড়ে ওই ছেলেটার হাত ধরে পালতে! যানো বাবা তোমাকে ছেড়ে যত দূরে যাচ্ছিলাম ততোই আমার চোখের পানি বেড়েই চছিলো। সেদিন থেকেই শুরু, তারপর থেকে প্রতিটা ধাপে ধাপেই জীবনকে নতুন করে শিখেই চলেছি আমি! কোন মুখে তোমার পরী তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে বাবা? তোমার চোখের পানি দেখার সাহস আমার হয়নি তাই আর কখনোই তোমার সামনে যায়নি।
তুমি আমার ওপর রাগ করে থাকতেই পারো বাবা, কিন্তু তাও প্রতিদিন তোমার পথ চেয়ে বসে থাকি, কবে তুমি তোমার এই পরীটাকে মাফ করে দিবে, কবে তুমি আবারো আমাকে বুকে জড়াবে। যানো বাবা, আমি ছোট মানুষ হলেও অনেক বড়ো বড় দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে আমাকে। এখানেও আমি একটা পরিবার পেয়েছি, সবাই আছে এই পরিবারে। এতো আপনজনের ভিড়ে তোমার পরীটা এখনো তোমার কোল খুঁজে বেড়ায়! তোমার অভাবটা আমার এখনো পূরণ হয়নি বাবা। যানো বাবা, তোমার পরীটারও এখন একটা পরী আছে, ও যখন প্রথম আমার কোল জুড়ে আসে তখন আমি আমার সব কষ্ট ভুলতে শুরু করি, আমার ছোট্ট পরীটাকে বুকে জড়িয়ে মাতৃত্বের স্বাদ অমুভব করতে থাকি! আমার এই ছোট্ট পরীটা যখন মা মা বলে ডাকতে থাকে তখন তোমাকে বড়ো বেশি মনে পরে বাবা! তুমি এতো একা কি করে আছো বাবা? স্বার্থপর হয়েও তো আমি ভালোই দিন কাটাচ্ছি তোমাকে লজ্জায় ডুবিয়ে! এতোটা কষ্ট তুমি মনে লুকিয়ে কি করে আছো বাবা?
যানো বাবা, আমার পরীটাও এখন অনেক বোরো হয়ে গেছে। ও যখন স্কুলে যায় আমি সারাদিন অনেক চিন্তায় থাকি, আমার সেই হারানো দিন গুলোর কথা মনে পড়েযায়! প্রতিদিন ভাবি আমার মেয়েটাতো কোনো ভুল করছেনা? ওরসাথেও কি এমন কিছু ঘটছে যা আমার সাথে অনেক বছর আগে ঘটেছিলো? এই ভয় গুলোই তোমার কষ্টের কথা একটু একটু করে মনে করিয়ে দেয়, মনে করিয়ে দেয় একটা বাবা তার মেয়েকে হারিয়ে ফেললে কতটা কষ্ট হতে পারে! এখন বুঝতে পারি বাবা কতটা লজ্জা দিয়ে মাথা নিচু কোরিয়েছি তোমার, কতটা চাপা কান্নায় পুড়িয়েছি তোমায়! তোমার সেই ছোট্ট পরীটার একটা ভুলে তোমাকে কতইনা অপমান সহ্য করতে হয়েছে! তোমার কাছে মাফ চাওয়ার ভাষা আমার যানা নেই, কিন্তু সেই অপরাধ বোধ এখন আমাকে তিলে তিলে পুড়ায়! যানিনা আমি এখন মা বলেই হয়তো তোমাকে দেয়া সেদিনের সেই কষ্ট গুলো বুঝতে পারছি, মা নাহলে হয়তো কোনো দিন বুঝতেই পারতামনা সেদিন কতটা নির্দয় হয়েছিলাম তোমার প্রতি! বাবা যানো, আমার ভীষণ ইচ্ছা করে তোমাকে একবার জড়িয়ে ধরে কান্না করতে! আমার সাথেও যদি কখনো আমার পরীটা এমন করে তুমি কি সেদিন আসবেনা বাবা আমাকে সান্ত্বনা দিতে? আমি তো তোমার মতো অতো বড়ো মনের মানুষ না বাবা যে সবটা সহ্য করতে পারবো! একবার আমাকে দেখতে এসো বাবা, সেদিন নাহয় আমাকে উপহাস করেই বোলো “দেখ মা পরী তোর জন্য কতটা যন্ত্রনা আমি সেদিন সহ্য করেছি”
আরো ses chithi পড়ুন এখানে