প্রিয়তম মৌলি,
—
শুরুতেই আমার পক্ষ থেকে এক রাশ রজনী গন্ধা ফুলের শুভেচ্ছা নিও। আশা করি ভালোই আছ… আর আমি চাই তুমি সব সময় ভালো থাকো। আমি কে, কেমন আছি, আমার পরিচয় কি জানতে চেয়ো না। অনেক দিন অনেক বার ভেবেছি তোমার সামনে আসব। আমার মনের কথা তোমাকে জানাব কিন্ত পারি নি। তোমার আমার সুন্দর এই মিষ্টি সম্পর্ক যদি নষ্ট হয়ে যায় সেই ভয়ে ভালোবাসার কথাটা মুখ ফুঁটে বলতে সাহস পায় নি। বন্ধুত্বের দোহাই দিয়ে এতদিন নিজেকে আটকিয়ে রেখেছিলাম কিন্তু না আর পারছি না। এবার সত্যি টা তোমাকে বলতে হবে… আমার মনের জমানো ভালোবাসার কথা তোমাকে জানতে হবে। তোমার সামনে দাঁড়িয়ে ভালোবাসি বলার সাহস টুকু আজও নেই তাই বাধ্য হয়েই তোমাকে আজ লিখতে বসলাম।
মৌলি তুমি কি জানো তোমাকে কতটা ভালোবাসি? তোমাকে এক পলক দেখার জন্য কতটা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকি কখন তুমি ছাদে আসবে আর আমি দু-চোখ ভরে তোমায় দেখব, তোমার সাথে একটু কথা বলার জন্য বুকের ভেতর ছটফট করতে থাকে তুমি কি তা জানো ?
আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক অনেক দিনের। কিন্তু বন্ধুত্বের আড়ালে কখন যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি নিজেও বুঝতে পারি নাই। তোমাকে একদিন না দেখলে কোন কাজে মন বসে না, তুমি কথা না বললে বুকের ভেতরটা ছটফট করে, এক ধরণের চাপা কষ্ট হয়… তোমাকে অনেক মিস করি। আচ্ছা তোমারও কি এমন হয়? তুমিও কি আমাকে ভালোবাসো না কি শুধুই বন্ধু ভাব ?
তোমার কথা বলা, ব্যবহার, তোমার টানা টানা চোখ, মায়াবী ওই চাহনি আমাকে মুগ্ধ করে দিয়েছে। তোমার কাজল কালো চুল, তোমার হাসির প্রেমে পড়ে গেছি। আমি চাইলেও তোমাকে না ভালোবেসে থাকতে পারি নাই। তোমার মায়ায় আটকে গেছি আমি..আর ফিরতে পারি নাই। দিন যত যায় ধীরে ধীরে তোমার প্রতি আমার ফিলিংস বাড়তে থাকে, আমার ভালোবাসা আরও গাঢ় হতে থাকে। তোমার অনুপস্থিতি আমাকে কাঁদায়… একটু একটু করে তুমি আমার হৃদয়ে কতটুকু জায়গা করে নিয়েছো আমি তা অনুভব করতে পারি। আস্তে আস্তে তোমার শূন্যতা উপলব্ধি করতে পারি।
এইতো সেদিনের কথা, এই ছাদ আর ওই ছাদ থেকে আমাদের কথা বলা শুরু.. রোজ বিকেলে তুমি ছাদে এসে হাঁটাহাঁটি করতে, পাখিদের সাথে কথা বলতে আর আমি আমাদের ছাদে বসে বসে অবাক হয়ে তোমাকে দেখতাম। কি অপরূপ মায়াবী চাহনি তোমার, চোখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম কিন্তু তোমাকে বুঝতে দিতেম না। আর বুঝবেই বা কি করবে তুমি তো ভুল করেও কোনদিন তাকিয়ে দেখতে না পাশের ছাদে কেউ আছে কি না? ১/২ দিন করে এভাবে প্রায় দিন ই তোমাকে দেখার জন্য ছাদে ছুটে আসতাম।কথা বলার ইচ্ছে থাকলেও বেশ কিছুদিন কথা বলতে সাহস হয় নাই। শুধু তোমাকে দেখতাম আর ভাবতাম কিভাবে তোমার সাথে কথা বলা যায়? কিভাবে বন্ধুত্ব করা যায়?
এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতে আরও ২০-২৫ দিন কাটিয়ে দিলাম। এরপর একদিন দেখি মৌলি পাখিগুলোর সাথে বিড় বিড় করছে আর আমিও হুট করেই মৌলিকে জিজ্ঞেস করে বসলাম,,
—এই মেয়ে তুমি প্রতিদিন একা একা কার সাথে এত কথা বল? এখানে তো কাউকে আর দেখি না….
—না মানে আমি আমার পাখিদের সাথে কথা বলি,একা একা বলব কেন?
—ওহ আচ্ছা পাখি! আমি তো ভাবলাম তুমি পাগলের মত একা একাই বিড় বিড় কর প্রতিদিন।
—এই যে মিঃ শুনেন আমি কিন্তু মোটেও পাগল না… হুহ, আর আমি প্রতিদিন আসি আপনি কিভাবে জানলেন? আমাকে কি ফলো করছেন ?
—আরে বাবা একসাথে এত প্রশ্ন করলে উত্তর দিব কিভাবে বল? না আসলে, আমি মাঝে মাঝে ছাদে আসলেই তোমাকে দেখি তো তাই বললম।
এইতো শুরু আমাদের…. এরপর আস্তে আস্তে পরিচিত হওয়া, একে অপরের সম্পর্কে জানা, দুজন দুজনের মনের কথা শেয়ার করা এভাবেই চলতে থাকে আমাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক।
প্রতিদিন নিয়ম করে তুমি ছাদে আসতে। আর আমিও বিকেল হলেই চলে আসতাম ছাদে। তুমি ফুল গাছে পানি দাও, পাখিগুলোকে খাবার দাও আর একটু একটু করে আমার সাথে গল্প কর। আমার বেশ ভালই লাগতো, আমিও অনেক দুষ্টামি করতাম, পাখিগুলোকে নিয়ে মজা করতাম আর ওকে ইচ্ছে করেই রাগিয়ে আমি দিতাম। বেশির ভাগ দিন বিকেলটা এভাবেই মজা করে কাটিয়ে দিতাম।কিছুদিনের মধ্যেই আমরা দুজনে বেশ ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম। আমাদের সুখ-দুঃখ, মন খারাপ, ভালো লাগা-খারাপ লাগা সব কিছু দুজনে শেয়ার করতাম। একদিন কথা না বললে আমাদের কারোই যেন রাতে ঠিক মত ঘুম হত না।
দিন যত যায় আমাদের সম্পর্ক আরো গভীর হতে থাকে। শুধু মোবাইল না এখন সোস্যাল মিডিয়াতেও নিয়মিত আমাদের কথা হয়…. রাতভর চলে আড্ডা,দুষ্টামি আর খুনসুটি।
আমি একটু অসুস্থ হলেই তার চিন্তার শেষ থাকে না, না খেলে বকাবকি শুরু করে দেয়, রাতে বন্ধুদের সাথে বাইরে বের হলে গালি দেয়, রাগ করে গাল ফুলিয়ে বসে থাকে… রাগ ভাঙ্গানো না পর্যন্ত মান-অভিমান পর্ব চলতেই থাকে।মেয়েটা একটু অভিমানী হলেও আমার কেয়ার করে, অনেক খেয়াল রাখে আমার কিন্তু কেন এমন পাগলামী করে আজও জানি না।
তোমার সাথে আড্ডা দেওয়া, তোমাকে নিয়ে মজা করা, হাসি ঠাট্টা আর খুনশুটি করা, তোমাকে ইচ্ছা করে রাগানো এসবের আড়ালে আমার ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। তুমি হয়তো আমার ভালোবাসা টা বুঝতে পার নি।
আমি ধীরে ধীরে তোমার প্রতি দুর্বল হতে থাকি, তোমার প্রতি আমার আকর্ষণ বাড়তে থাকে। তোমার প্রেমে আমি দিশেহারা। এক মুহূর্তের জন্যও কথা না বলে থাকতে পারি না, দেখার জন্য ছটফট করতে থাকি — তুমি কি আমার অনুভূতি বুঝতে পার? তুমি যে শুধু আমার বন্ধু নও বন্ধুর থেকেও বেশি কিছু।আমি সত্যি সত্যি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি “মৌলি “… কেন কিভাবে কিচ্ছু জানি না শুধু এইটুকুই জানি তুমি ছাড়া আমার এ জীবন অর্থহীন।
তুমি কি আমার এ জীবনকে অর্থপূর্ণ করে গড়ে তুলতে পারবে? সারাজীবন পাশে থেকে নতুন করে আমার জীবনকে সাজিয়ে দিতে পারবে কি?
আমাকে হুটহাট বকা দেওয়া, একটুতেই রাগ দেখানো, আমার প্রতি কেয়ারিং, আমাকে নিয়ে এত চিন্তিত দেখে সত্যি মাঝে মাঝে মনে হয় তুমিও আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো কিন্তু লজ্জায় মুখে বলার সাহস পাচ্ছ না… আর আমি বন্ধুত্বের জন্য। জানি না কোনটা সত্যি আর কোনটা আমার কল্পনা? তবে সত্যিটা জানার অপেক্ষায় রইলাম…
দিন দিন তোমার জন্য অপেক্ষা করা, তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা, তোমাকে মিস করা দ্বিগুন বেড়ে গেলো। কেন জানি কোন কিছুতেই ভালো লাগে না,কাজে মন বসে না…. মনের জমানো কথাগুলা তোমাকে বলার জন্য সারাক্ষণ ছটফট করতে থাকে।প্রতিদিন ভাবি আজ ই আমার মনের কথাগুলা তোমাকে বলে দিব, অনেক বার বলার চেষ্টা ও করেছিলাম কিন্তু দুৰ্ভাগ্যবশত আজও তোমাকে বলে উঠতে পারি নাই। এতটাই ভালো সম্পর্ক আমাদের মধ্যে তাইতো তোমাকে হারানোর ভয় পেতাম, নিজেকে আড়াল করে রেখেছিলাম।কিন্তু আর নাহ আমি তোমার কাছে লুকিয়ে কিছুতেই থাকতে পারছি না, আমার ভালোবাসার কথা জানার সম্পূর্ণ অধিকার তোমার আছে। তোমাকে আরও আগে না জানিয়ে ভুল করেছি, আমি আর ভুল করতে চাই না… তাই আজ আমার মনের জমানো কথাগুলা তোমাকে লিখে জানালাম… তুমি কি আমার জীবনসঙ্গী হিসেবে সারাজীবন আমার পাশে থাকবে “মৌলি ” ?
আমি তোমার মুখে সমস্ত সত্যিটা জানার অপেক্ষায় রইলাম……..
ইতি ,
তোমার পাগল বন্ধু
আরো ভালোবাসার চিঠি পড়ুন এখন থেকে Valobasar Chithi