Shopnobilap
সেদিন রাতের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না
সেদিন রাতের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না

সেদিন রাতের জন্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না

খুব নম্র-ভদ্র ও চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে ফারিহা। পড়ালেখায় ও বেশ ভালো। এবার ক্লাস টুয়েলভে পড়ে, সামনে এইচ এস সি পরীক্ষা দিবে। সারাদিন ক্লাস,কোচিং আর বন্ধুদের সাথে আড্ডা,হৈ হুল্লোড় নিয়েই মেতে থাকে। ক্লাসের ফাঁকে একটু বিরতি পেলেই বান্ধবীদের নিয়ে গল্পের আসর জমিয়ে দেয়। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনর্গল কথা বলতে থাকে সবাই মিলে। কার কি স্বপ্ন, কে কোন ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করবে ,কার বিয়ে কবে হবে এই সব নিয়ে আড্ডা চলতেই থাকে। ফারিহার মনে অনেক স্বপ্ন। একদিন সে পড়ালেখা করে চাকরি করবে,নিজে স্বাবলম্বী হবে। বিয়ে নিয়েও তার যেন স্বপ্নের শেষ নেই। বিয়েতে কোন ড্রেস পড়বে,বৌ-ভাতে কোনটা পড়বে,কিভাবে সাজুগুজু করবে এমনকি বাসর রাত কিভাবে কাটাবে এসব নিয়েও গল্প চলতে থাকে। অন্য সবার থেকে তাকে তার বর বেশি ভালোবাসবে, বাসর রাতে বরের সাথে বসে বসে চাঁদ দেখবে আর সারারাত ধরে গল্প করবে দুজন মিলে এমন টাই স্বপ্ন দেখে ফারিহা।

এভাবেই ফারিহার দিন কাটতে থাকে, পরীক্ষা ও প্রায় শেষের দিকে। কোথায় ভর্তি হবে এখন সেই চিন্তা। ভর্তি পরীক্ষার বেশি সময় নেই হাতে তাই বাসায় ই প্রস্তুতি নিতে থাকে। আর কিছুদিন পর ই শুরু হয়ে যাবে ভর্তি যুদ্ধ।

এরই মধ্যে ফারিয়ার কয়েকজন বান্ধবীর বিয়ে হয়ে যায়। বেচারি বান্ধবীদের বিয়ের দাওয়াত খায়, বান্ধবীদের কাছে বাসর রাতের গল্প শুনে গল্প শুনে,মজা ঠাট্টা করে আর নিজের স্বপ্নের কথা উদাস মনে ভাবতে থাকে ফারিহা, কবে এই দিনটা তার জীবনে আসবে আর বাসর রাত নিয়ে তার স্বপ্ন গুলো পূরণ হবে ।

এভাবে আরও বেশ কিছুদিন চলে গেলো। ভর্তি পরীক্ষা শেষ। প্রায় তিন মাসের প্রস্তুতি শেষে শহরের একটা ভার্সিটিতে ভর্তি হলো ফারিহা। ভার্সিটিতে নতুন নতুন বন্ধুবান্ধবী, নতুন পরিবেশ সব কিছু মানিয়ে আরেকটি অধ্যায় শুরু করল…ক্লাস, গল্প-আড্ডা,ঘুরাঘুরি সব কিছু মিলিয়ে বেশ উপভোগ করে দিনগুলো।

ছয় মাস কেটে গেছে…..প্রায় সব ফ্রেন্ড এর ই গার্লফ্রেন্ড ও বয়ফ্রেন্ড আছে। শুধু ফারিহার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই। ফারিহা দেখতে অসুন্দর বা কেউ তাকে পছন্দ করে না এমন কিন্তু না, আসলে ফারিহার ই তেমন কোন ছেলেকে পছন্দ হয় নি। কলেজ থেকে ভার্সিটি বহু ছেলের প্রপোজাল পেয়েছে কিন্তু আজ পর্যন্ত মনের মত কাউকে খুঁজে পায় নি। কলেজ জীবনে একজন কে ভালো লাগলে ও মুখে ফুটে বলতে পারেনি। তাই আজও একা ফারিহা। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে ভালোবাসার মানুষের সাথে দূরে কোথাও ঘুরতে যেতে, নিজের জীবনের গল্প গুলো শেয়ার করতে কিন্তু মনের মত জীবনসঙ্গী খুঁজে পায় না। প্রেম করা আর হয়ে উঠে না ফারিহার। এভাবে 1st ইয়ার শেষ করে 2nd ইয়ার পা দিয়েছে ফারিহা। 1st ইয়ার এর রেজাল্ট তা ভালোই করেছে সে । কলেজে মোটামোটি সবাই ফারিহা নামটার সাথে বিশেষ ভাবে পরিচিত ।

ফারিহার বয়সটা এখন বিষের কোঠায়, বাসা থেকে ২/১ টা বিয়ের কথা চললে ও ফারিহা না করে দেয়। এরই মধ্যে কলেজের ২ একজন বাধে, সব বান্ধবীর ই বিয়ে হয়ে গেছে। সবার বিয়ের দাওয়াত খেলেও নিজের বিয়ের দাওয়াত এখন পর্যন্ত কাউকে দিতে পারে নি। এ নিয়ে বেশ হাস্য কৌতুক চললেও সে বিয়ে করতে রাজি না। এদিকে 2nd ইয়ার এর ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করে 3rd ইয়ারের নতুন ক্লাস শুরু হয়ে গেছে।এঅবস্থায় বাসা থেকে বিয়ের জন্য প্রচন্ড চাপ আসতে লাগলো। বাসার সবার একই কথা মেয়ে বড়ো হয়েছে, বিয়ে দিতে হবে, পড়ালেখা বিয়ের পরে করবে, এতেতো কোনো সমস্যা নেই। পরিবারের সবাই রাজি শুধু ফারিহা ছাড়া।

হয়তো কোন পছন্দের ছেলে আছে তাই ফারিহা বিয়েতে রাজি হচ্ছে না। ওর কোন পছন্দ আছে কি না তার মা জানতে চাইলে সে বলে তার কোন পছন্দ নাই, এখন বিয়ের জন্য প্রস্তুত না,সে পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করতে চায় । কিন্তু তার বাবা মা কোন কথা শোনে না ,বলে যে বিয়ের পর পড়ালেখা করবা, সংসার করেও সব করা যায়। একরকম জোর করেই ফারিহা রাজি হয়ে গেলো । তোমাদের যখন এতোই সমস্যা আমাকে নিয়ে, তবে দাও, আমাকে বিয়ে দিয়ে তাড়িয়ে দাও।

ফারিহার চাচা একটা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। ফারিহার মা তাকে ছেলেটির ছবি দেখতে বললে, ফারিহা বলে তোমার জামায় হবে তুমি দেখো, বিয়ের পর আমি সব কিছু মানিয়ে নিবো । রাগে, ক্ষোভে, যেভাবেই হোক না কেন বিয়েতে রাজি হলে ও ফারিহার বাবা মার্ প্রতি তার বিশ্বাস ছিল । দেখে শুনে মেয়ে কে তারা যার তার হাতে তুলে দিবে না । ছেলের সম্পর্কে কিছুই জানে না ফারিহা, এমন কি পরিবারে কে কে আছে,কি করে এমনকি ছেলের নাম পর্যন্ত শুনে নাই । তার ইচ্ছা ছিল বাসর রাতে পরিচিত হবে সে ।

ছেলের নাম আসিফ, বয়স খুব একটা বেশি না ২৬ শেষে ২৭ এর কোঠায় পা দিয়েছে সবে, ফারিহার চেয়ে বড়োজোর ৪ – ৫ বছরের হবে । ছোটখাটো একটা জব করে আসিফ, বাবা, মা, বোন আর আসিফ মিলে ৪ জনের সংসার তাদের আর এর সাথে আর ও একজন জড়িত হতে যাচ্ছে তার নাম ফারিহা । আসিফের পরিবারের সবাই খুব ভালো, খুব হাসি খুশি এবং ঝামেলা বিহীন দিন কাটে তাদের ।

অবশেষে, অনেক আনন্দ,হৈ-হুল্লোড় আর কান্না কাটির মধ্যে দিয়ে বিয়ে হয়ে যায় আসিফ ও ফারিহার । বিয়ের দাওয়াতে ফারিহার অনেক বন্ধু বান্ধবী এসেছিলো, কেউ, কেউ বরের সাথে বিয়ের দাওয়াতে এসেছে । আর সব বান্ধবীগুলো খুব লোভী হয়ে ফারিহা কে বলছে এতদিন আমাদের বাসর রাতের গল্প সুনছিস এবার আমরা তোর বাসর রাতের গল্প শুনবো হু ।

বিয়ে শেষ, এবার বাসর রাত, ফারিহার কাঙ্ক্ষিত সেই রাত যে রাতের জন্য ফারিহা মোটেও প্রস্তুত ছিলোনা। নতুন বৌ,মাথায় ইয়া বড় ঘোমটা দিয়ে খাটের উপর বসে আছে ফারিহা। অপেক্ষায় আছে বর কখন আসবে ? সব অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আসিফ রুমে ঢুকতেই ফারিহার শরীর সিউরে উঠলো। বাসর রাট নিয়ে অনেক স্বপ্ন থাকলে ও আসিফ ঘরে ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে ভয়ে যেন হাত পা কাঁপতেছে তার। অপরিচিত একটা মানুষ না জানি কেমন হবে ,কি না কি বলবে বসে বসে এসব ভাবতে লাগলো। হঠাৎ পাশ ফিরাতেই লক্ষ্য করল আসিফ হাতে একটা কাঁথা আর বালিশ নিয়ে চুপচাপ মেঝেতে গিয়ে শুয়ে পড়ছে।

ফারিহা দেখে তো অবাক এইটা কি করে হতে পারে। আজ তাদের প্রথম রাত দুজনে মিলে চাঁদ দেখবে, একে ওপরের কথা শেয়ার করবে,পাশাপাশি বসে সারারাত গল্প করবে তা নয় উনি গিয়ে আলাদা শুয়ে পড়লেন। বাসর রাত কখনো এমনটা হয় নাকি আগে ভাবে নি ফারিহা। আর ৮/১০ টা মেয়ের মতোই অনেক স্বপ্ন ছিল বাসর রাত নিয়ে। কিন্তু ফারিহার স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো। রাগে অভিমানে কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলো না। একরাশ দুঃখ-কষ্ট নিয়ে ও ঘুমিয়ে পড়লো ফারিহা ।

সকালে ঘুম থেকে উঠার পর নাস্তার টেবিলে বসে নাস্তা করছে এমন সময় ওর ননদ জিজ্ঞেস করল কি ভাবি, কেমন কাটলো রাত। ফারিহা নিশ্চুপ কি বলবে ভেবে না পেয়ে লজ্জায় উঠে চলে গেল। বিয়ের পর আসিফ হঠাৎ একাকী সময় কামনা শুরু করেছে । পরিবারের সবাই একসাথে বসে আড্ডা দিলেও সে কারো সাথেই সেভাবে মিশে না। যেন মনে হচ্ছে ফারিহা কে বিয়ে করে জীবনের সবচেয়ে বড়ো ভুল করেছে সে । সকালে উঠে আসিফ ওর মতো নাস্তা করে অফিসে চলে যায়, ফারিহা ঘরের ২/৪ টা কাজ করে সারাদিন কাটিয়ে দেয়, অফিস শেষে রাতে বাসায় ফিরে খেয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ে যে যার মত ।

বিয়ের ৭ দিন এভাবেই চলে যায়। আসিফ একটা বারের জন্যও ফারিহার সাথে কথা বলে নি, মুখ পর্যন্ত দেখে নি কেউ কারো। ৮ দিনের দিন দুজন মিলেই ফারিহার বাবার বাড়ি যায় বেড়াতে। সেখানে গিয়েও একই প্রশ্নের মুখোমুখী হতে হয় বান্ধবীদের কাছে। তখন ফারিহা তাদের বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে গল্প শোনায়। আসিফ তাকে কতটা কেয়ার করে,ভালোবাসে,গিফট কিনে আনে এসব অনেক কিছু গুছিয়ে বলে যেন কেউ তাদের সন্দেহ না করে । আসিফের ছুটি শেষ ফারিহাকে এবার শশুর বাড়িতে যেতে হবে। ওই বাড়িতে যাওয়ার কথা মনে হলেই ফারিহার রাগ হয়,মন খারাপ করে কিন্তু উপায় নাই যেতেই হবে।

বাড়িতে ফিরে সন্ধ্যায় সবার সাথে বেশ ভালোই গল্প জমে বৌ,শাশুড়ী আর ননদ মিলে। সেদিনের সব কাজ শেষ,ফারিহা ঘরে বসে আছে। প্রতিদিনের ন্যায় আসিফ শোবার জন্য যেই বালিশ আর কাঁথা হাতে নিয়েছে ওমনি ফারিহা লাফ দিয়ে ওর টি-শার্টের কলার ধরে বলতে লাগলো।…..

—এই তোর সমস্যা কি ? আমাকে কি দেখতে ভালো লাগে না ? আমি কি এতটাই খারাপ ?
—কি বলবে ভেবে কূল পায় না আসিফ, থতমত খেয়ে বলল না তুমি খারাপ হবে কেন ? তোমাকে তো সেভাবে দেখি নাই কখনো।
—তাহলে বিয়ে করছিস কেন আমাকে ? আমার সাথে এক বিছানায় ঘুমাস না কেন ? কি হয়েছে বল, আজ তোকে সবটা বলতেই হবে।
—আসিফ ভয়ে চুপসে গেছে , ঠিক আছে বলছি বেলকনিতে আসো।

বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে ফারিহা গ্রিলের ফাঁক দিয়ে আবছা চাঁদের আলো দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষণ পরই আসিফ আসল এসে ফারিহাকে তার আগের রিলেশনের কথা সব খুলে বলল। সে অনেক দিন আগের কথা,আসিফ একটা মেয়েকে অনেক ভালোবাসতো, তাদের মধ্যে তেমন কোন সমস্যাও ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করেই মেয়েটি সব সম্পর্ক ছিন্ন করে অন্য একজনকে বিয়ে করে, আর এরপর থেকেই আসিফ এমন বদলে গেছে। বিয়ে সে করতে চায় নি শুধু বাবা-মার কারনে ফারিহাকে বিয়ে করা। সবকিছু শুনে ফারিহা বললো যেভাবেই হোক বিয়েতো তুমিই করেছো, সময় হিসেবে আমার কাছে কি তোমার কিছুই চাওয়ার নেই? আসিফের চুপ থাকা দেখে ফারিহা আর কোনো কথা না বলেই চুপচাপ রুমে এসে শুয়ে পড়ল।

পরদিন সকালে সবার সাথে টেবিলে বসে নাস্তা খেয়ে অফিস চলে গেলো আসিফ। আসিফ বুঝতে পেরেছে ফারিহার সাথে এমন ব্যবহার করে উচিত হয়নি তার । আসলেইতো সময় হিসেবে কি ফারিহার কাছে কিছুই চাওয়ার নেই আমার? কিই বা চাইবো ফারিহার কাছে । স্বামী হিসেবে বউ এর কাছে একটু কেয়ার, একটু ভালোবাসা, অফিসে থেকে বাসায় ফিরে পানি চাইলে, পানির সাথে একটা বিস্কিট এই তো, হ্যা আসিফ এতকিছু না ভেবে ঠিক করলো আজ সে ফারিহার কাছে এই গুলোই চাইবে।

বিকেলবেলা একটু আগে আগেই ফিরেছে আসিফ, বেশ হাসি খুশি লাগছে আজ। ওর মা ও বোন খেয়াল করল বিষয়টা। সন্ধ্যায় চা খেতে খেতে ভাবিকে জিজ্ঞেস করল ভাইয়া কে কি এমন জাদু করেছো ভাবি,ভাইয়া অনেকটা চেঞ্জ ? ফারিহা কিছু না বলে বিষয়টা এড়িয়ে গেলো।

রাতে ফারিহা বিছানা ঘুমের ভান করে শুয়ে আছে বিষয়টা কি হয়েছে বোঝার জন্য। আসিফ একটু পর রুমে এলো কিন্তু আজ আর কাঁথা বালিশ হাতে নিয়ে টানছে না, ফারিহার তো অবাক, কি হলো আজ হঠাৎ ফিরিয়ে আছে কেন ? আসিফ এক পা, এক পা, করে ফারিহার দিকে এগিয়ে আসছে আর ফারিহা ভয় পাচ্ছে, কি হতে চলেছে আজ । একটু পর যেই আসিফ ফারিহার পশে গিয়ে শুয়েছে, অমনি ফারিহা উঠে বসলো।

কি ব্যাপার? কি হয়েছে ? আজ এখানে কোনো ?
আসিফঃ আমার রুম, আমার বেড আমি যেখানে খুশি ঘুমাবো তোমার কি সমস্যা ?
ফারিহা ভীষণ রেগে আছে, এতদিন বউয়ের খবর নেয়ার না নাই, আর আজ তার রুম, তার বেড, সে যেখানে খুশি ঘুমাবে, আবার একটু খুশি ও হচ্ছে যে আসিফ তাকে একটু হলে ও অনুভব করতে শুরু করেছে ।
কিন্তু সেদিন রাতে আসিফ আর ঘুমায়নি বেলকনিতে বসে সারা রাত পার করেছে, আর ভেবেছে কি করে সে ফারিহা কে বলবে যে যা হয়েছে ভুলে যাও, আমি তোমাকে ভালোবাসি ফারিহা ।

খুব ভোরে ফারিহা ঘুম থেকে উঠে দেখে আসিফ বেলকনিতে চেয়ারে বসে আছে । কিছু না বলে সে রুম থেকে বাইরে গিয়ে হাতের কাজ গুলো শুরু করলো । বরাবরের মতো নাস্তা করে সকাল বেলা যথারীতি অফিসে গেলো আসিফ । ফারিহা রান্না বান্না ও সমস্ত হাতের কাজ শেষ করে গোসলে যাবে এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো। দুপুরে একসাথে লাঞ্চ করবে বলে কাউকে না জানিয়ে আসিফ বাসায় চলে আসছে। কলিং বেলের আওয়াজ শুনে গেট খুলতেই আসিফকে দেখে ফারিহা অবাক। আসিফ কিছু না বলে রুমে ঢুকেই বললো এক গ্লাস পানি দাও খুব তৃষ্ণা লেগেছে , বাহিরে যা গরম আজ । ফারিহা তো আসিফের কথা শুনে অবাক, এই প্রথম বারের জন্য আসিফ তার কাছে পানি চেয়েছে, ফারিহা পানি না দিয়ে, ঠান্ডা লেবুর শরবত আসিফ কে দিল। ফারিহার হাতে লেবুর শরবত দেখেই যেন আসিফের তৃষ্ণা মিটেগেছে । এতটুকুইতো আসিফ তার বউয়ের কাছে চায় ।

অনেক দিন পর তারা পরিবার এর সবাই মিলে একসাথে দুপুরের খাবার খেতে বসেছে, খাবারের টেবিলে শুরু হয়েছে হাসি ঠাট্ট, খাবার শেষে একটু বিশ্রাম আবার বিকেল হতে সবাই কাসাথে কেরাম খেলা, মুভি দেখা আর অনেক হৈ-হুল্লোড় করে দিনটা কাটিয়েছে আসিফ । পুরো বাড়িতে যেন আনন্দের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে । সবার মতো ফারিহা ও আসিফ কে দেখে অবাক হচ্ছে, এই হাসি খুশি মানুষটা কিভাবে তার সাথে এভাবে এতগুলো দিন কাটিয়েছে । রাতের খাবার শেষে যে যার ঘরে চলে গেলো । রীতিমতো ফারিহা বিছানায় শুয়ে আছে । আসিফ ঘরে ঢুকতেই……….

ফারিহা : আসিফের দিকে ছুড়ে এই নাও তোমার কাঁথা, বালিশ, আমার বেড আমি কারো সাথে শেয়ার করবো না ।
আসিফ; কিছুক্ষন কাঁথা বালিশ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর, তুমি বেড শেয়ার করবেন তাতে আমার কি, আমি আমার বৌয়ের পশে ঘুমাবো, তাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো, আজ থেকে কোলবালিশের মুক্তি ।

ফারিহা আসিফের কথাগুলো শুনে অবাক, নিজেকে আর আটকাতে না পেরে দৌড়ে আসিফ কে জড়িয়ে ধরে বললো, তুমি এত সহজে বদলে গেলে কেন? আমার দিন গুলো ভালোই যাচ্ছিলো, আমি অপেক্ষায় ছিলাম তোমার, আমি জানতাম তুমি আমাকে এভাবে অবহেলায় রাখতে পারো না। কিন্তু এতো সহজে বদলে যাবে ভাবিনি। কি হয়েছিল গো ? আমাকে বলবে ? আসিফ, হুম বলবো, তুমি তো আমার একমাত্র বউ, তোমাকে না বললে আর কাকে বলবো । আসিফ তার চাওয়া গুলো ফারিহাকে বললো। আর কিভাবে না চাইতে তার চাওয়া গুলো পূরণ হলো সেটা ও বললো । আবার ফারিহা আসিফ কে ধাক্কা দিয়ে বললো, ধুর আমি ভাবলাম তুমি আমাকে ভালোবেসেছো, আর তুমি কিনা এক গ্লাস লেবুর সরবতের প্রেমে পড়লে?

আসিফ: ওকে ডার্লিং এত সহজে বদলে যাবার জন্য আমি দুঃখিত, আজ থেকে আমরা আবার আলাদা, একটু দেরি করে বদলে আসি হ্যা, আর তুমি অপেক্ষায় থেকে বুড়ি হয়ে যাও ।
ফারিহা: সেটা আর সম্ভব নয়, আমি তোমাকে এতটা কাছে টেনেছি যে, তুমি ইচ্ছা করলে ও আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না ।

সেই প্রথম বারের মত আজ দুজন এক সাথে, এক বিছানায় ঘুমিয়েছে, আজ পর্যন্ত আলাদা হয়নি । প্রথম রাতের মতো সে রাতের জন্য ও প্রস্তুতু ছিলোনা ফারিহা । এখন তাদের মধ্যে খুব বেশি ঝগড়া না হলে ও যখনি একটু আধটু অভিমান হয়, তখনি ফারিহা বলে উঠে কি দেব নাকি একগ্লাস লেবুর শরবত ।

তাদের বয়সটা এখন ৬০ এর কোঠায় কিন্তু এখনো ভালোবাসার কমতি নেই, নেই হাসি ঠাট্টর অভাব তবে এখন মাঝে সাঝেই আসিফ কে একগ্লাস লেবুর শরবত দিতে হয় । তাদের গল্পটা, বন্ধু, বান্ধবী, আত্মীয় স্বজন, এমন কি ছেলে মেয়েরা ও তাদের বন্ধু বান্ধবীরা ও জানে ।

এই গল্পটা আমার সবচেয়ে কাছের বান্ধবী আসমানির বাবা, মায়ের দাম্পত্য জীবনের গল্প । আজ আঙ্কেল, আন্টি বেঁচে নেয় কিন্তু তাদের দাম্পত্য জীবনের গল্পটা রয়েগেছে অনেকের মুখে ।

 

আরো জীবনের গল্প পড়ুন এখানে Jiboner Golpo

4.6/5 - (30 votes)

তাসনিয়া তাবাসসুম

x