Shopnobilap
Shopno Bilap

মাংশভুক পাখি

ফুলের পোশাকে ঢাকা শরীর, দারুন মাংশভুক পাখি,

ওই শকুন, ওই হিংস্র গোপন নোখ জু্ড়ে থাকা শত্রু-স্বভাব,

আমাদের দিন থেকে খেয়ে যাবে প্রিয়তম রোদের মাংশ।

ওই নষ্ট চোখ

ওই চতুর ঘাতক

ওই ফুলাবৃত শকুন

খেয়ে যাবে, খেয়ে যায় মানুষের শুভ্র ধান, পলিমাটি, নীড়,

জোস্নার ধমনী থেকে খেয়ে যায় সৌরভ-কনিকাগুলো।

ঋতু বদলের ভোরে

আমাদের শাখা থেকে তরুন কৃষ্ণচুড়া,

আমাদের ভালোবাসা থেকে সুনীল সবুজ বিক্ষোভগুলো

ছিঁড়ে নিয়ে গেছে ওইসব নষ্ট শকুন। ওইসব মাংশভুক পাখিরা

আমাদের চোখ থেকে খেয়ে গেছে দৃষ্টির স্বাধীন বসবাস।

আমাদের বুক থেকে

আমাদের প্রান থেকে

ভাষার ভুবন থেকে

শোভন শব্দগুলো কেড়ে নিয়ে গেছে ওরা আমাদের প্রিয়তম আকাশটুকু।

সূর্যহীন, জোস্নাহীন, এই কালো অন্ধকারে

দু্র্ভিক্ষের মতো

ফুলের পোষাকে ঢাকা ওই হিংস্র গোপন নোখ,

ওই মাংশভুক পাখি, ডানা থেকে ফুলের পালক খুলে ফেলে

উড়ে এসে বসবে সব শহরে- গ্রামে- জীবনের সবুজাভ নিসর্গে,

পান্ডুর দেহ থেকে ছিঁড়ে খাবে রক্ত মাংশ, প্রিয়ফুল। আমাদের

রাত থেকে নিদ্রাগুলো

লাল নক্ষত্রগুলো

স্বাধীনতাগুলো

কেড়ে নিয়ে গেছে ওরা। কেড়ে নিয়ে যাবে চিরকাল?

প্রেমের নিকটে গিয়ে ফিরে আসি– বুকে ভালোবাসা নেই

জোস্নার নিকটে গিয়ে ফিরে আসি– চোখে স্বাধীনতা নেই

শ্রমের নিকটে গিয়ে ফিরে আসি– বাহুতে বিশ্বাস নেই

মানুষের কাছে গিয়ে ফিরে আসি– দেহে মমতারা নেই

নেই, নেই, ফুল নেই, পাখি নেই, রোদ নেই, স্নেহ নেই,

খেয়ে গেছে গোপন ঘাতক–

শুধু হাড়,

শুধু এক ভয়ানক গ্লানিমাখা আকাংখা নিয়ে

প’ড়ে আছে কলুষিত করুন কংকাল, মৃত কিছু পুষ্টিহীন

হলুদ করোটি।

বোধি নেই, স্থিতি নেই, অনাহারে নক্ষত্রের মতো জেগে আছি,

করতলে শেষ বিশ্বাসের শিকড়ে এসে থেমে আছে দূষিত ক্ষরন।

তবুতো আকাংখারা মাঝে মাঝে চিৎকার কোরে ওঠে সফেন সাগর,

তবুতো কোনোদিন একদিন বৈশাখি রাতে জীবন এসে বলেছিলো:

হাড়ের খুলির মাটি কোনো এক বর্ষার পর ঠিকই পাললিক হবে,

খরার মাঠের বুকে দেখো ঠিক মেলে দেবে ফসলের সোনালি পালক॥

১৪/০৭/১৯৭৬

সিদ্ধেশ্বরী, ঢাকা।

Thanks for Recommend!

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ

Add comment

x